ইফতারসামগ্রীর জন্য পদ্মাপাড়ের বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সুনাম দেশজুড়েই। তবে এবার পবিত্র রমজানের প্রথম দিন রাজশাহীতে গেল কয়েক বছরের তুলনায় ইফতারসামগ্রীর দাম অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে গত বছরের চেয়ে এবার ইফতারি কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ টাকা।
ছোলা, বুট থেকে শুরু করে ইফতারির প্রতিটি সামগ্রীর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে। আবার যেসব সামগ্রীর দাম বাড়েনি, সেসব সামগ্রীর আকার ছোট হয়ে গেছে। তারপরও রমজানের প্রথম দিনই ইফতারির দোকানগুলো ছিল ক্রেতা সমাগমে পূর্ণ।
দাম বেশি হলেও বিকেল থেকে লোকজন ভিড় করে দোকানে দোকানে। রাজশাহী নগরীতে ইফতারির আইটেমও করা হয়েছে অন্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এতে বলাই যায়, রমজানের প্রথম দিনই জমে উঠেছে রাজশাহীর ইফতার বাজার।
মহানগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার গলি পথেও ঐতিহ্যবাহী ইফতারসামগ্রী নিয়ে বসেছেন মৌসুমি দোকানিরা। মহানগরীর সাহেববাজার, আলুপট্টি, কুমারপাড়া, ভদ্রা, সোনাদিঘির মোড়, সিঅ্যান্ডবি মোড়, লক্ষ্মীপুর, কাদিরগঞ্জ, বিন্দুরমোড়, নিউমার্কেট, গণকাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ইফতার। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই দোকানগুলোতে রকমারি ইফতার তৈরি হয়েছে এ বছরও। ঘিয়ে ভাজা বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, স্পেশাল ফিরনি, ক্ষিরসা, ফালুদা, নবাবী টানা পরোটা, কাশ্মিরি পরোটা, চিকেন মসলা, রেশমি কাবাব, তেহারি, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন ফ্রাই, মাঠা-ঘোল ও নানা রকমের জুসসহ জনপ্রিয় ইফতারসামগ্রীগুলো এবারও শুরুতেই মন কাড়ছে রাজশাহীর মানুষের। প্রথমদিন ইফতারে স্বাদের ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য আনতে সাধ ও সাধ্যমতো সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।
মহানগরীর গণকপাড়া এলাকার রহমানিয়া রেস্তোরাঁর কর্মী রেজাউল করিম জানান, তারা সব রকমের ইফতারের আইটেমই তুলে এনেছেন। যাতে সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারা যায়। যেমন তাদের আছে স্পেশাল ফিরনি, শিক কাবাব, মাটন লেগ রোস্ট, স্পেশাল গরুর তেহারি। এ ছাড়া ছোলা, বুট, বেগুনিসহ অন্যান্য নিয়মিত ইফতার আইটেম তো রয়েছেই। রমজানের প্রথমদিনে ভিড় বেড়েছে।
ইফতার কিনতে আসা নিউমার্কেট এলাকার ক্রেতা জাহিদ হোসেন বলেন, আজকে রহমতের প্রথম দিন। আর এদিনে পরিবার-পরিজন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করবেন। যার জন্য রেশমি জিলাপি, স্পেশাল ফিরনি, ক্ষিরসা ও পরোটা কিনেছেন।
নগরীর ভদ্রা এলাকার ঐতিহ্যবাহী অতিথি রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন ধরনের ইফতারসামগ্রী কিনছেন নগরীর মোন্নাফের মোড় এলাকার হাসান তানভীর। তিনি কালবেলাকে বলেন, একটি রেশমি কাবাব ১৫০ টাকা, বিফের শিক কাবাব ১৪০ টাকা, চিকেন সাসলিক ১০০ টাকা, ব্যাংকক চিকেন ৪০ টাকা, চিকেন জালি কাবাব ৪০ টাকা, মাটন পরাটা ৫০ টাকা, শামী কাবাব (বিফ) ৫০ টাকা এবং একটি চিকেন ফ্রাই কিনলাম ৫০ টাকা দিয়ে। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের ইফতারসামগ্রীর দাম বেড়েছে।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কালোজিরা মিশ্রিত জিলাপির বেশ কদর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। আব্দুল হাকিম নামে এক ক্রেতা বলেন, জিলাপির মান ঠিকই আছে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় দাম বেশি। গত বছর এক কেজি জিলাপি ছিল ৩০০ টাকা। আর এবার কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০০ টাকা। এভাবে প্রতিটি ইফতারের দাম বাড়ানো হয়েছে।
রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়া এলাকার জুয়েল রানা বলেন, বুট, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও জিলাপিসহ বিভিন্ন ইফতার পণ্যের দাম এবার গত বছরের চেয়ে বেশি। প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্য রমজান শুরু হওয়ার আগে যা ছিল রমজানের প্রথম দিনেই সেই সব পণ্যের মূল্য বেড়েছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি দামেই স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করছেন তার মতো সাধারণ ক্রেতারা।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁর সমানে বাহারি ইফতারের পসরা সাজানো হয়েছে। সামনে পণ্যের তালিকা সংবলিত ব্যানারও টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোজাদারদের আকর্ষণ করার জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর সামনে ডেকোরেশন করা হয়েছে। ইফতারসামগ্রী বিক্রির জন্য এবং ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য কেউ কেউ ঢাকা থেকে বাবুর্চিও নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ রকমারি ইফতার দিয়ে সাজিয়েছেন ইফতারের প্যাকেজ। রোজাদারদের জন্য দিচ্ছেন বিভিন্ন অফারও।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ইফতারির সব প্রকার পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধু ইফতারি নয়; সব ভোগ্যপণ্যের দাম আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকারকে রমজান মাস উপলক্ষে ইফতারিসহ সব পণ্যের দাম মনিটরিংয়ের অনুরোধ জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন