ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ায় জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজে থাকা বাংলাদেশি ২৩ নাবিকের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা। তিনি লক্ষ্মীপুর রায়পুরের রাখালিয়া গ্রামের মৃত আজহার মিয়ার ছেলে।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিরন বেপারী বাড়িতে গিয়ে আইয়ুবের মাকে ছেলের জন্য আর্তনাদ করতে দেখা যায়।
প্রায় ১ মাস আগে তার বাবা মারা যান। এখনো গৃহকর্তা হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবারটি। এরমধ্যেই পরিবারের ছোট ছেলে সাগরে ডাকাতদের কবলে রয়েছে। এ শোকে আইয়ুবের মা হোমায়রা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পর পরই ছেলেকে বুকে চেয়ে আর্তনাদ করে উঠেন।
জানা গেছে, আইয়ুব রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রামগঞ্জের ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমি থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। প্রায় ১ বছর ধরে ইন্টার্নি করছেন আইয়ুব।
জানতে চাইলে মা হোমায়রা জানান, সোমবার (১২ মার্চ) বিকেলে আইয়ুব তার সঙ্গে শেষবার কথা বলেছে। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) তার অন্য ছেলেদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কেউ তাকে কিছু জানায়নি। গত রাতে তিনি নাতিনের কাছ থেকে শুনে মেঝো ছেলেকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চান। মেঝো ছেলে তাকে জানিয়েছে, আইয়ুবের জন্য চিন্তা না করতে। ভারত মহাসাগরে আইয়ুবদের জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যুরা অস্ত্র ঠেকিয়ে কব্জা করেছে। এসব শোনার পর থেকেই কান্না করে, সারারাত ঘুমাতে পারেননি। আইয়ুবের কোনো খবরও পাওয়া যাচ্ছে না। তার ছেলে কীভাবে, কেমন আছে? এসব বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি আমার বাবারে চাই। আমি আর কি চাইতাম। আমি দু’দিন ধরে কোরআন শরিফ জান-প্রাণ দিয়ে পড়েছি। আইয়ুবও পরশু ধরে কোরআন শরিফ পড়া শুরু করেছিল। আল্লাহ আপনি রহমত নাজিল করে দেন। আমার স্বামী মারা যাওয়ার ২০-২৫ দিন আগে সবশেষ আইয়ুব বাড়িতে এসেছিল। একদিন থেকেই পরে চলে গেছে।
আইয়ুবের বন্ধু আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আইয়ুব খুব ভালো বন্ধু। আমরা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে চাই। তিনি যেন দ্রুত আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে।
আইয়ুবের প্রতিবেশী ভাতিজা তারেক হোসেন বলেন, আইয়ুব চাচা ভালো মানুষ। আমাদের সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করতেন। আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। আমরা তাকে দ্রুত ফেরত চাই।
মন্তব্য করুন