মানিকগঞ্জের শিবালয়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন ও ভেকু দিয়ে কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে হুমকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ জাফরগঞ্জ এলাকার বেড়িবাঁধ।
এ ছাড়া প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। এসব মাটি ও বালুবাহী ট্রাক মহাসড়কে চলাচল করায় বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
জানা গেছে, আরিচা থেকে জাফরগঞ্জ, আরিচা থেকে পাটুরিয়া ঘাট ও পাটুরিয়া ঘাট থেকে বাল্লা মালুচী পর্যন্ত অনেকটি ড্রেজার দিয়ে যমুনা নদীর তীর থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ ছাড়া জুনি মানিক নগর, ঢাকাইজুড়া, শিমুলিয়া বনগ্রাম, বেলতার চক, কাত্রাশিন তারা মসজিদ, জমদুয়ারা, বীর বাশাইল এলাকায় ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব অবৈধ বালু ও মাটি ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে হাতি নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। নদী তীরবর্তী ড্রেজার প্রতি সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর কৃষিজমি কাটার জন্য লেক প্রতি গুনতে হয় ভেকু ব্যবসায়ীদের ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ড্রেজার ও ভেকু ব্যবসায়ী বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ না করে এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব। সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা আর লেকপ্রতি মোটা অংকের টাকা দেওয়ার পরই মৌখিকভাবে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ করে দেন। মাটি ও বালু মহলের চাঁদার টাকা নিচ থেকে উপর মহল সবখানে পৌঁছানোর পরে এ ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।
স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু মাটি উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আগামী বর্ষায় নদীর পাড় এলাকার ফসলি জমি, ঘর-বাড়িসহ সরকারি স্থাপনা মারাত্মকভাবে নদী ভাঙনের কবলে পড়বে। এসব বালু মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় এবং প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
বাল্লা থেকে পাটুরিয়া, আরিচা নদীবন্দর ও তেওতা থেকে জাফরগঞ্জ বেড়িবাঁধসহ আশপাশের গ্রামগুলো বর্ষার সময় নদী ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
হেমগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, ‘সব সময় নদীর নিচু এলাকা দিয়েই পানির প্রবাহ বইতে থাকে। তাই বর্ষার সময় পানির প্রবল স্রোতে নদীর পাড় এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। একবার ভাঙন শুরু হলে আশপাশের গ্রামগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
তেওতা গ্রামের সোলায়মান মোল্লা বলেন, ‘ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে বর্ষা এলেই নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়। তখন আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এলাকারই কিছু লোকজন প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে। ভয়ে সাধারণ লোকজন তাদেরকে কিছুই বলতে সাহস পায় না।’
পাটুরিয়া ঘাট এলাকার অটোরিকশা চালক বাদশা মিয়া বলেন, ‘ঘাটের বাইপাস সড়ক এখন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। রাত-দিন বালু ভর্তি খোলা ট্রাক লোড ও চলাচল করায় রাস্তায় বালু পড়ে ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ধুলা-বালুতে পথচারীদের চলাচলে অনেক অসুবিধা হয়।’
বাসচালক জমিরউদ্দীন বলেন, ‘মাটিবাহী ট্রাক মহাসড়কে চলাচল করায় রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে মাটি পড়ে বৃষ্টির পানিতে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় বাস চলাচলে সড়ক দুর্ঘটনা ঝুঁকি বেশি থাকে।’
শিবালয় বন্দরের ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে যেভাবে নদী থেকে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের সম্ভাবনা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এসব বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা বা আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও এই ড্রেজারগুলো যদি বন্ধ না হয়, সেই ক্ষেত্রে কি ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, উপজেলা ও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তুলে ধরব।’
মন্তব্য করুন