রাজশাহীতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৮ মার্চ) মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী পুলিশ লাইনস্-এ ৯ মণ ওজনের একটি গরু জবাই করা হয়।
এই বিষয়ে আরএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনায় এই গরুর মাংস বিক্রি করা হয়। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২ কেজি মাংস ৬০০টাকা কেজি দরে ক্রয় করতে পারবেন। পবিত্র রমজান মাসে খেটে খাওয়া মানুষ যাতে কম দামে গরুর মাংস ক্রয় করে খেতে পারেন সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৫ মার্চ) কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪ (ঝ) ধারার ক্ষমতা বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে কৃষি এসব পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ করে। কিন্তু রাজশাহীতে সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ছোলা প্রতি কেজি ৯৮ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও রোববার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে রাজশাহীর বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে। এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬৪ টাকা। এ ছাড়া ছাগলের মাংসের দাম ১ হাজার ৩ টাকা। তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায়।
সরকার নির্ধারিত মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ মাছের খুচরা দাম ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছের দাম সর্বোচ্চ ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব মাছের কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
এ ছাড়া, সরকার নির্ধারিত দামে ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। তবে বাস্তবে এই দামে কোনো কিছুই মেলেনি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টাকা নির্ধারিত করা হলেও বাজারে মিলছে ১০৮ টাকা ডজন।
অন্যদিকে, সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও সিম ৫০ টাকা ও আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৪ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়, বেগুন ও সিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি।
অন্যদিকে, বাজারে প্রতি কেজি জাহেদী খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাজশাহী বাজারে সর্বনিম্ন খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে। এ ছাড়া চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তবে চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে।
রাজশাহীতে সরকার নির্ধারিত ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য সেই দামে বিক্রি না হওয়ার বিষিয়টি আরএমপি’র কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারের নজরে আসে। তখন তিনি খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভেবে রমজান মাসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে গরুর মাংস বিক্রির এক অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। খেটে খাওয়া মানুষ একদিকে যেমন সরকারি মূল্যে গরুর মাংস ক্রয় করতে পারবেন, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রিতে উদ্যোগী হবেন বলে আশাবাদী তিনি।
মন্তব্য করুন