ইসলাম ও সংস্কৃতির নিদর্শন সাতক্ষীরার তালার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে মসজিদটি বর্তমানে মিয়া মসজিদ নামে পরিচিতি পেয়েছে। মোঘল আমলে তৈরি এই মসজিদটি বর্তমানে সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।
মসজিদটির সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের। তবে সঠিক তদারকি, সংস্কার ও যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাবে দক্ষিণ অঞ্চলের মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইবাদতখানাটির সৌন্দর্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, ১৬০০ শতাব্দীর প্রথম দিকে মোঘল আমলে ধার্মিক মুসলিম জমিদার কাজী সালামতুল্লাহ খান বাহাদুর এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নকশা ও কারুকাজের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বিহারের এক বাসিন্দা।
এদিকে, প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন হওয়ার পর মসজিদটির সঠিক দেখভাল করে না কর্তৃপক্ষ। মসজিদ কমিটির অভিযোগ, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে মসজিদ সংস্কারের বিষয়ে অনেকবার জানানোর পরেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং মসজিদ কমিটির নিজ খরচে সংস্কারের করতে চাইলে দেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
মসজিদের খাদেম মো. মাসুদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মসজিদটির দেখাশোনা করে আসছি। গত ২৬ বছরে কোনো সংস্কার হয়নি। নিজেদের খরচে সংস্কার করতে চাইলেও বাধা প্রদান করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। মোগল সাম্রাজ্যে তৈরি এই মসজিদটি নিজের সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। ইসলাম ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য বাহক এই মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।
মসজিদের খতিব আব্দুর রব বলেন, মোঘল আমলের এই মসজিদটি দেশের গৌরব। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসেন। তবে মসজিদের পাঁচালি ও মিনারের অংশগুলো লোনা ধরে ধ্বসে পড়ছে। বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাঁটল ধরেছে। ভবনটি কিছু অংশ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ধ্বসে পড়ার উপক্রম। বিষয়গুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কাছে বারবার লিখিত অভিযোগ জানালেও তারা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রাচীন এই মসজিদটির জন্য এখনো কোনো বরাদ্দ আসেনি বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, মসজিদে মানসম্মত কোনো বাথরুম ও অজুখানা নেই। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ নিয়েও কোনো কাজ করেনি। তার অভিযোগ, মসজিদে মুসল্লি সংকুলান না হওয়ায় বারান্দার সঙ্গে নামাজের স্থান তৈরি করা হয়েছিল, সেটা প্রশাসন তাৎক্ষণিক ভেঙে ফেলতে বাধ্য করে আমাদের।
মসজিদের ইমাম মো. আব্দুল জর্দ্দার বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাজ হলো পুরার্কীতিগুলো সংরক্ষণ করা। কিন্তু তারা নিজেরাও কাজ করে না, আমাদেরও কাজ করতে দেয় না। ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই সরকারের কাছে।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে এখানে দেখাশোনার জন্য লোক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। একই সঙ্গে এখানকার ইমাম মোয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা আজও কার্যকর হয়নি।
প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় প্রধান লাভলী ইয়াসমিন বলেন, মসজিদটি সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। সেখানকার পরবর্তীতে চিঠি পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন থাকলে সেটা অন্য কেউ সংস্কার করতে পারেন না।
মন্তব্য করুন