চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাছে গাছে উঁকি দিতে শুরু করেছে আমের মুকুল। আমের রাজধানী খ্যাত এ জেলায় চলতি বছর আম মৌসুম শুরু হয়েছে কিছুটা দেরিতে। জলবায়ুর কারণে বিলম্ব শীত, শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ায় এবার গাছে মুকুল দেরিতে এসেছে।
গতবছরের তুলনায় বাগানগুলোতে এবার মুকুলের সংখ্যা কম। সাধারণত যে বছরে বাগানে মুকুল বেশি আসবে পরের বছরে সেই বাগানে মুকুল আসে কম। এখন পর্যান্ত জেলার ৮০ ভাগ আম গাছে ফুটেছে মুকুল। কিছু কিছু গাছের মুকুলে গুটিও আসতে শুরু করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এতে আমগাছ রয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৫টি। এ হিসাবে এবার জেলার আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন।
গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এ বছরে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ২৫ হাজার টন।
আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলাতে কমবেশি আম উৎপাদন হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে প্রায় ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৮২৫টি।
শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউপির আম চাষি ও বাগান মালিক আব্দুল মতিন মাস্টার জানান, ‘গতবছরের চেয়ে এ বছর বাগানে মুকুল এসেছে কম। তার বাগানের বেশকিছু বয়স্ক আমগাছে মুকুল কম হলেও মাঝারি বয়সী ও ছোট গাছগুলোতে মুকুল এসেছে মোটামুটি। শিলাবৃষ্টি, ঝড়, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ মুকুলে পুষিয়ে যাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৫টি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আম ব্যবসায়ী মুঞ্জের আলম মানিক জানান, ‘এ বছর আমের অফ ইয়ার, মুকুল কিছুটা কম এসেছে। শেষ সময়ে তার ক্ষীরশাপাতি আম বাগানে মুকুল এসেছে। মুকুল রক্ষায় বাগানে সার সেচ দিয়ে নিতে হচ্ছে বাড়তি পরিচর্যা, বাড়ছে খরচ। আমকে লাভজনক করতে আম প্রসেসিং পণ্য উৎপাদন এবং আমকেন্দ্রিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা দরকার।’
এদিকে নাচোল উপজেলায় বরেন্দ্র লাল মাটিতে বাড়ছে আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ। এখানে প্রায় ৪ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৯ লাখ ৮ হাজার ৮৫০টি আম গাছ রয়েছে।
নাচলের আম উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আম গাছের নিবিড় পরিচর্যায় বাগানে মুকুল এসেছে ভালো। এখন গুটি ধরাতে ভালো ফলনের আশায় সার, কীটনাশক ও সেচ দিচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, এ বছর আমের অফ ইয়ার হওয়ায় মুকুল কিছুটা কম এসেছে। জলবায়ুর কারণে দেরিতে এসেছে শীত, ফেব্রুয়ারি মাসে তীব্র শীত শৈত্যপ্রবাহ ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মুকুল এসেছে দেরিতে। আমের অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। আমরা কৃষকদের মাঠপর্যায়ে গিয়ে উঠান বৈঠক করে মুকুল টেকাতে ও গুটি পরিচর্যায় বাগানে সেচসহ সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি । চলতি বছর মুকুল কিছুটা কম হলেও আমের উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ২৫ হাজার টন আম বেশি হবে । উৎপাদন দাঁড়াবে ৪ লাখ ৫০ হাজার টনে।
মন্তব্য করুন