মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উঁচু নিচু পাহাড়ি টিলার গা ঘেঁষে আগাম জাতের আনারসের চাষাবাদ প্রতি বছর বাড়ছে। বাজারে মূল্য ভালো পাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন আগাম আনারস চাষে। এতে অনেক আনারস চাষির ভাগ্য বদলে গেছে। উৎপাদিত আগাম এসব আনারস রসাল ও মিষ্টি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। আনারসের উৎপাদন বাড়াতে বিদেশ থেকে আনা এমবি-২ জাতের আনারস কৃষকদের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে।
এসব আনারস প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। শ্রীমঙ্গলে উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলার গায়ে সারি সারি গাছ থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ সুস্বাদু ও পুষ্টিযুক্ত আনারস উৎপাদন হচ্ছে। বিভিন্ন জাতের আনারসের চাষ হলেও শ্রীমঙ্গল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এর চাষ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। তবে আগাম আনারস চাষে খরচ বেশি হলেও লোকসানের ভয় থাকে না। এ বছর মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ১ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২০ হাজার ৬০০ টন। এ অঞ্চলে জলডুবি, হানিকুইন ও জাইনকিউ নামের আনারসের উৎপাদন হয়ে আসছে। উৎপাদন বাড়াতে সহজে পচবে না এমন জাত এমবি-২ আনারস সম্প্রতি বিদেশ থেকে এনে কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ইউরিয়া সারের ঘাটতি নেই বলে জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বিগত কয়েক বছর থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলায় আগাম জাতের আনারস চাষ হয়ে আসছে। আনারসের আগাম ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় স্থানীয় আনারস চাষিদের মধ্যে প্রতি বছর আগ্রহ বাড়ছে। উৎপাদিত আনারস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মৌসুমের আনারসের চেয়ে আগাম উৎপাদিত আনারসে বাড়তি লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। অসময়ে উৎপাদিত আনারসের চাহিদা থাকায় বাজারজাত নিয়ে চাষিদের কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না। খুচরা বাজারে আনারসের আকার অনুযায়ী প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আনারস চাষি ইরেশ পাল, মো. ইউনুস খান, সাহাব উদ্দিন বলেন, সারের দাম বেড়ে যাওয়া ও সময়মতো প্রয়োজনীয় সার না পাওয়ায় বাগানে সঠিক পরিচর্যা হচ্ছে না। এতে করে আনারসের আকার ছোট হচ্ছে।
চলতি মৌসুমের শুরুতে চাষিরা আনারসের মূল্য ভালো পেয়েছেন। বর্তমানে বাগানগুলোতে একসঙ্গে আনারস পরিপক্ব হওয়ায় অধিকাংশ বাগান মালিকরা আনারস সংগ্রহ করে আড়তদারের কাছে নিয়ে যান। ওই সময়ে প্রতিদিন আড়তে কয়েক লাখ আনারস ওঠে। চাষিরা আনারস ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা।
মৌলভীবাজার আড়তদার সমিতি সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আনারস সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাগান থেকে আনারস সংগ্রহের এক দিনের মধ্যে চাষিরা বিক্রি করে দিতে হয়। আনারস পচনশীল থাকায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ আনারস প্রতি মৌসুমে নষ্ট হয়ে যায়। চাষিরা নষ্ট হওয়ার ভয়ে ন্যায্যয্যমূল্য পাওয়ার হিসাব না করে বিক্রি করে দিতে হয়।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক (পিপি) নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, আনারস চাষিদের দাবি পাহাড়ের পতিত জমি আনারস চাষিদের কাছে লিজ দিলে যেমনি উৎপাদন বাড়বে তেমনি বেকার সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আনারস বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থান, আনারস সংরক্ষণাগার ও প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপনের দাবি জানান তারা।
মন্তব্য করুন