তিস্তা রেলসেতুর স্লিপারে লোহার পাতের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার নিয়ে কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রচারের পর তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে ওই বাঁশ সরিয়ে ফেলেছে লালমনিরহাট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে বাঁশ সরিয়ে ফেলা হলেও স্লিপারে এখনো ব্যবহার করা হয়নি লোহার পাত। মেরামত করা হয়নি নষ্ট স্লিপার, টাইট করা হয়নি স্লিপার থেকে খুলে পড়া নাট-বল্টু। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সেতুটি মেরামত এবং একটি নতুন রেলসেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত হয় তিস্তা রেলসেতু। নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৮৩৪ সালে ২ হাজার ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণ করে। ১৮৩৪ সালে নির্মিত সেতুটির মেয়াদ ওই সময় ধরা হয়েছিল ১শ বছর। বর্তমানে যার বয়স চলেছে ১৮৬ বছর। স্লিপার ধরে রাখতে লোহার পাতের পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয় বাঁশ। মাঝে মধ্যে ফাঁটল দেখা দিলে তা ঝালাই দিয়ে মেরামত করে চালানো হচ্ছে ট্রেন।
দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ১৮টি ট্রেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা থেকে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এ সেতুর ওপর দিয়ে পার হচ্ছে কয়েক হাজার যাত্রী। মেয়াদ উত্তীর্ণ সেতুটির বেশকিছু স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে, খুলে পড়েছে অনেক স্লিপারের প্লেট ও নাট-বল্টু। পাশাপাশি স্লিপার ধরে রাখতে লোহার পাত ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও বাঁশ ব্যবহার করা হয়। মাঝে মধ্যে ফাটল ঝালাই দিয়ে মেরামত করা হয়। দীর্ঘদিন অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকা সেতুটিতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। মেয়াদ উত্তীর্ণ সেতুটির পাশে আর একটি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়নে নেই কোনো উদ্যোগ।
স্থানীয়রা জানান, সেতুর উপর ট্রেন উঠলে ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। প্রতিদিন অনেক ট্রেন চলাচল করে এ সেতু দিয়ে অথচ এটির বিষয়ে কোনো গুরুত্ব নেই রেল কর্তৃপক্ষের।
উত্তরের দুই জেলার রেলযোগাযোগের একমাত্র ভরসা তিস্তা রেল সেতু। এটি বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে। সেতুটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হতে পারে রেলযোগাযোগ। তারা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তবে তিস্তা রেল সেতুটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ নয় দাবি করে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, সেতুর উপর ভারী ট্রেন উঠলে একটু ঝাঁকুনি হতেই পারে। অল্প সময়ের সেতুর রেললাইনের স্লিপারে লোহার পাত ব্যবহার করা হবে। বর্তমানে এ সেতু দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চলাচল করতে পারবে বলেও তিনি দাবি করেন।
মন্তব্য করুন