মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্প্রতি নঁওগা জেলার রাজস্ব প্রশাসন এবং পুলিশ কনস্টেবল পদে ১৮১ জন তরুণ-তরুণী নিয়োগ পেয়েছেন। প্রত্যেকেই সরকারি চাকরি নামক সোনার হরিণ পেয়েছে মেধার ভিত্তিতে।
এ নিয়োগে কাজে আসেনি কোনো তদবির কিংবা অর্থের লেনদেন। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা এবং পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক।
নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে। সরকারি চাকরি পেতে গেলে করতে হবে তদবির। গুনতে হবে লাখ লাখ টাকা। বিক্রি করতে হবে শেষ সম্বল।
কিন্তু টাকা কিংবা সুপারিশে চাকরি হয় এমন চিন্তাধারাকে পাল্টে দিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির এমন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় সাধুবাদ জানিয়েছে নওগাঁর সচেতন মহল।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার রাজস্ব প্রশাসনে ১৫ ও ১৬তম গ্রেডে নয় ক্যাটাগরিতে ৩৭টি শূন্যপদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। এতে ৬ হাজার ৭৭২ জন প্রার্থী আবেদন করে। লিখিত পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪২ জন অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয় ১০৬ জন।
ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে ৩৩ জনকে সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ২০তম গ্রেডে তিন ক্যাটাগরিতে ৮৩টি পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৮৩ জনকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করে কর্তৃপক্ষ।
নওগাঁ পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় দুই হাজার ২৩১ জন। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণ হয় ৫৪৫ জন। পরে চতুর্থ ধাপের লিখিত পরীক্ষায় ২২০ জন উত্তীর্ণ হয়। সেখান থেকে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ৬৫ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত নওগাঁ সদর উপজেলার মাদ্রাসাপাড়ার মো. ছুফি উল্লাহ তানভীর কালবেলাকে বলেন, আমার মতো দরিদ্র ঘরের ছেলে টাকা ছাড়া মেধায় সরকারি চাকরি পাব তা কল্পনাও করিনি। জেলা প্রশাসক স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চকতাতারু গ্রামের শ্রাবন্তী বানু বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করব। বান্ধু-বান্ধবদের কথায় ১২০ টাকা খরচ করে আবেদন করেছি। অনেকে বলেছিল, এসব নিয়োগে টাকা লাগে। এতে মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু মনোবল হারাইনি। সব পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে পাস করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। কোনো টাকা কিংবা সুপারিশের দরকার হয়নি।
পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, ‘নিয়োগে কিছু কিছু বিতর্ক থাকায় অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই নিজেদের যোগ্যতা ও মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সে জায়গা থেকে স্বচ্ছতার সহিত আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এখানে কোনো যোগাযোগ ও অর্থের লেনদেন হয়নি। বর্তমানে সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। এখন চাকরির ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন করা হয়।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, আমি ভবিষ্যতে সাধারণ জনগণের চিন্তা করেছি। যে টাকা দিয়ে চাকরি নিবে, তার চিন্তা থাকবে কীভাবে টাকা তোলা যায়। এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর থেকে আমি প্রচার করেছি, শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কেউ যেন প্রতারণার শিকার না হয় এবং তদবির না করে সে জন্য সবাইকে লেখাপড়া করার পরামর্শ দিয়েছি। আমি আমার কথা রেখেছি। কোনো অনিয়ম হতে দেইনি। কারও তদবির শুনি নাই। শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সামনে আরও নিয়োগ আছে। সেটাও শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যদি কোনো ঝামেলা হয় তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে। শূন্য থাকবে পদ। তারপরও কোনো অনিয়ম করতে দিব না।
মন্তব্য করুন