কনুই লাগাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর গাছতলাঘাট এলাকার একটি চায়ের দোকানে। এ ঘটনায় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ ১৪ জন আহত হয়েছে। পরে আহতদের ১০ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাতে পৌর শহরের গাছতলাঘাট নার্সারি রোড এলাকা ও মাদ্রাসা রোড এলাকার দুই গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভৈরব থানা ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাছতলাঘাট এলাকার দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৫ মার্চ রাতে গাছতলাঘাট বাজারে ছিদ্দিক মিয়ার চায়ের দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় ওই এলাকার মুজিবুর মিয়ার শরীরে নার্সারি রোড এলাকার রাহাদ নামে এক যুবকের কনুই দিয়ে আঘাত করে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। স্থানীয়রা এসে ঝগড়া থামিয়ে পরদিন সন্ধ্যায় মীমাংসা করা হবে বলে জানান।
২৭ মার্চ রাত ৮টায় এ ঘটনায় স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী সোহাগসহ নেতৃবৃন্দ সালিশ দরবারে বসেন। সালিশ শেষে দুইপক্ষ আবারও দা, বল্লম, লাঠিসোঠা, ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে উভয়পক্ষ এলোপাতাড়ি রাস্তার পাশের থাকা মাদ্রাসা মার্কেটসহ ৫০টির মতো দোকানপাট বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের ১৪ জন আহত হয়।
আহতরা হলো, হৃদয় মিয়া, মনির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ফাহিম মিয়া, কাসেম মিয়া, বাধন মিয়া, সবুজ মিয়া, মাহিন খান, মিলন মিয়া, জীবন মিয়া তারা সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঝগড়া ফেরাতে গিয়ে কাউন্সিলর আলী মোহাম্মদ সোহাগ আহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা কাল্লু মিয়া ও মুশাদ মিয়া জানান, মারামারি হতেই পারে তাই বলে দোকানপাট বাড়িঘর ভাঙচুর করবে কেন। আমরা কি অপরাধ করেছি। এলাকার কিছু বখাটে এই ঝগড়ার সৃষ্টি করেছে। আজ রোজা রেখে আমরা অনেক মুসুল্লি তারাবীহ নামাজ পড়তে পারি নাই।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার ইয়াহিয়া বলেন, আমাদের কি অপরাধ? আল্লাহ আমাদের প্রাণে বাঁচিয়েছে। হঠাৎ এলোপাতাড়ি দোকানে দায়ের কোপ দিতেছিল। কোনোরকম প্রাণে বেঁচেছি। আমার দোকানসহ অনেক দোকানের সাটারগুলো ভেঙে দিল।
এ বিষয়ে কমলপুর মাদ্রাসা এলাকার মুজিবুর মিয়া বলেন, সোমবার রাতে আমি চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। রাহাদ নামে এক যুবক আমাকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছে। আবার আমার কাছে ক্ষমা না চেয়ে খারাপ ব্যবহারও করেছে। পরে আমার ভাই ভাতিজার সাথে এ নিয়ে ঝগড়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দরবার সালিশে এ নিয়ে আবার ঝগড়া হয়।
এ বিষয়ে নার্সারি রোড এলাকার মোহন মিয়া বলেন, সোমবার (২৫ মার্চ) আমার ছোট ভাই রাহাদ চায়ের দোকানে চেয়ারে বসতে গেলে মুজিবুর মিয়ার শরীরে কনুই লেগে যায়। সাথে সাথে আমার ছোট ভাই মাফও চেয়েছে। কিন্তু মুজিবুর মিয়া তার বাড়ির লোকজন ডেকে আমার ছোট ভাইদের মারধর করেছে। পরদিন আবার সালিশ দরবারে তারা আমার ভাইদের মারধর করে। পরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।
পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী সোহাগ বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনায় দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ফেরাতে গিয়ে আমিও আঘাত পেয়েছি।
মন্তব্য করুন