ভোলায় এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের ফলন ভালো হলেও রমজান শুরুতে অতি লাভের আশায় বাজারে আসতে থাকে অপরিপক্ব তরমুজ। এ ফলের চাহিদা থাকায় প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা আকাশচুম্বী দর হাঁকান।
বর্তমানে তরমুজের দাম কমলেও দেখা দিয়েছে ক্রেতা সংকট। ৮/১০ কেজির তরমুজ এখন ২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে তরমুজের সরবরাহ বাড়ায় এবং ক্রেতা না থাকায় লোকসানে পড়েছে চাষিরা। তরমুজ পেকে গেলেও ক্রেতা না থাকায় অনেক চাষি জমি থেকে তরমুজ তুলছেন না।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বিপরীতে চাষ হয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯ লাখ ৬২ হাজার টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে সাত লাখ ৮০ হাজার টন। গত বছর তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর, যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৮ টন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তরমুজের প্রায় ৯০ ভাগই আসে চরফ্যাশন উপজেলা থেকে। প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমেও চরফ্যাশনে তরমুজের প্রচুর আবাদ হয়েছে। সেখানকার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে নুরাবাদ, মজিবনগর, চরকলমী, আহম্মদপুর, নীলকমল, আবুবক্করপুর, রসুলপুরসহ ৮টি ইউনিয়নে তরমুজের আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের চাষি জামাল উদ্দিন বলেন, তিন একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গেল বছরের তুলনায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত তিন লাখ টাকার তরমুজও বিক্রি করতে পারিনি।
ঢাকার কাওরান বাজার থেকে আসা তরমুজ ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, চাষিদের কাছ থেকে পুরো ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে ঢাকায় বিক্রি করি। তাতে করে ১০-১২ কেজি ওজনের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৮০-১২০ টাকা। যদিও গেল বছর এই তরমুজ তাদের ক্রয় করতে হয়েছে ২০০-২৫০ টাকায়। এ বছর ভোলার অধিকাংশ চাষিরাই তরমুজ আবাদে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর কালবেলাকে বলেন, ‘এবার ভোলায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৫২ টন। এখানকার তরমুজ সারা দেশে জনপ্রিয়। এখান থেকে ফেরি, লঞ্চ ও ট্রলারে করে তরমুজ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এ বছরের শুরুর দিকে চাষিরা তরমুজের দাম ভালো পেয়েছেন। তবে মাঝামাঝি সময়ের দিকে হঠাৎ করে ক্রেতা না থাকায় বাজার দর কমে গিয়ে কোনো কোনো চাষি বিপাকে পড়েছেন। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই বাজার দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি।’
মন্তব্য করুন