বাড়ি ভিটার ওপর ড্রেন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় এক বিধবা নারীকে পরিবারসহ দীর্ঘ ৯ মাস ধরে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী এক গ্রাম্য মাতব্বরের বিরুদ্ধে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব দৈলজোর মাস্টারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
অভিযুক্ত মাতব্বর সোলায়মান আলী প্রভাশালী ও স্থানীয় মসজিদের সভাপতি। ভুক্তভোগী বিধবার নাম লিপি বেগম।
জানা গেছে, সরকারি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পানি নিষ্কাশনের জন্য জোরপূর্বক ওই বিধবা নারীর বসতবাড়ির জমির ওপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণের চেষ্টা করেন স্থানীয় প্রভাশালী সোলায়মান মাতব্বর ও তার লোকজন। এতে বাধা দেন বিধবা লিপি বেগম। পরে ড্রেন নির্মাণে ব্যর্থ হওয়ায় ওই মাতব্বরের নির্দেশে লিপি ও পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়।
এ ঘটনায় গত বছরের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৯ মাসেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনকে আজও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না স্থানীয় মসজিদে। কথা বলতে পারছেন না আশপাশের কারও সঙ্গে। এমনকি মাতব্বরের ভয়ে বিধবা নারীর মুদি দোকান থেকেও কেউ কিনছেন না কোনো পণ্য। প্রভাবশালী ওই মাতব্বরের ভয়ে দীর্ঘ ৯ মাসেও কেউ মুখ খোলেনি গ্রামের কোনো ব্যক্তি। পাশে দাঁড়ায়নি স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি।
সম্প্রতি প্রতিবেশীর বিয়ের দাওয়াতে লিপির পরিবারকে দাওয়াত করা হলে মাতব্বরের চাপে সেই দাওয়াতে যায়নি কেউ। ফলে একঘরে করার বিষয়টি আরও প্রকাশ্যে আসে। পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার প্রতিবাদ করলে মাতব্বরের লোকজন ভাঙচুর করে তাদের বাড়িঘর।
লিপি বেগমের অভিযোগ, থানায় অভিযোগ করেও মেলেনি কোনো সমাধান। পরে পুলিশ সুপারকে জানানো হলে, তিনি ঘটনাস্থলে এলে প্রতিবেশী নারী-পুরুষদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। পরে উল্টো ওই মাতব্বর বাদী হয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের নামে থানায় মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ফলে দীর্ঘ ৯ মাসেও ঘটনার কোনো সমাধান হয়নি। থানা পুলিশ নেননি কোনো ব্যবস্থা।
এ দিকে এক ঘরে করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন বলে সাফ জানিয়ে দেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম। আর গ্রাম্য মাতব্বর সোলায়মান জানান, সব জায়গায় তার লোক আছে। কোনো মামলায় ভয় পান না তিনি।
মন্তব্য করুন