গত কোরবানির ঈদ নাজমুলকে সঙ্গে নিয়েই কেটেছে। সেই ঈদে গরু কোরবানি দিয়ে কত আনন্দই না করেছিল আমার ছেলে। এই ঈদে আমার নাজমুল কাছে নেই। আমি কীভাবে ছেলেকে ছাড়া ঈদ করব। আমার ছেলে ঈদের দিন কী খাবে, নতুন জামা পরতে পারবে কি না।
আল্লাহ তুমি আমার বুকের মানিককে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও। তুমি আমাকে নিয়ে নাও। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করি, আমার বুকের ধনকে এনে দেন, আপনার জন্য আমি দোয়া করব। আল্লাহ যেন আপনাকে আরও হায়াত দান করেন।
শনিবার (৬ এপ্রিল) এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন সোমালি জলদস্যুদের হাতে আটক এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক নাজমুলের মা নার্গিস খাতুন।
নার্গিস খাতুন কালবেলাকে বলেন, জলদস্যুরা যেদিন আমার ছেলেসহ ২৩ জনকে আটক করে তখন খোঁজখবর নিতে সরকারি লোক এবং চেয়ারম্যান এসেছিল। এরপর ২৩ দিন পার হয়ে গেলেও আমাদের ছেলেকে ছাড়া আমরা কীভাবে দিন পার করছি, সামনে ঈদ কীভাবে পার করব কেউ খোঁজখবর নেয়নি।
তিনি বলেন, শুধু শিপিং অফিস থেকে মাঝেমধ্যে ফোন করে বলে চিন্তা করবেন না, নাজমুল ভালো আছে। ছেলের চিন্তা করতে করতে আমি এবং নাজমুলের বাবা দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমাদের দেখার কেউ নেই। আমরা নাজমুলকে ছাড়া কীভাবে দিন পার করছি কেউ জানে না।
নাজমুলের বাবা আবু শামা শেখ বলেন, আমি কাজ করতে পারি না, অস্থির হয়ে যাই। ছেলের আয়ের উপরেই চলে সংসার। একমাত্র ছেলে আমার ভাঙা ঘরে থাকে। এবার সে ১০ মাসের জন্য গেছিল। ফিরে এসে ঘর করার কথা ছিল। জানি না আল্লাহ কি করে। ছেলেকে আর দেখতে পাব কিনা। ওর কিছু হলে আমরা শেষ হয়ে যাব।
নাজমুলের প্রতিবেশী শাহ্ আলম বলেন, নাজমুল আটক হওয়ার পর খুবই কষ্টে পরিবারটি দিন পার করছে। আমাদের উপজেলা প্রশাসন সেই ২৩ দিন আগে একবার এসেছিল। পরে কেউ তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। এই সময়ে পরিবারটির পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো উচিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন সুলতানা কালবেলাকে বলেন, নাজমুলের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ আমাকে কেউ জানায়নি কিংবা ওনারাও আমার কাছে আসেনি। এসিল্যান্ড প্রথম দিন গিয়েছিল। আমি ব্যস্ত থাকায় এতদিন যেতে পারিনি। আগামীকাল ঈদ উপহার নিয়ে যাব নাজমুলের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে যদি আর্থিক সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি আছেন জাহাজের ক্রু হিসেবে চাকরি পাওয়া সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের নাজমুল হাসান। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে নাজমুলের ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন মা-বাবা, বোন ও আত্মীয়স্বজনরা।
মন্তব্য করুন