চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাবনায় ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা শুরু

পাবনার চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে চড়ক গাছে দুধ, ফুল দিয়ে পূজা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ছবি : কালবেলা
পাবনার চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে চড়ক গাছে দুধ, ফুল দিয়ে পূজা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ছবি : কালবেলা

চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে পাবনার চাটমোহরে প্রায় ৭শ বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা শুরু হয়েছে। বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতার পর শুক্রবার (১২ এপ্রিল) উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামে পূজা ও মেলা শুরু হয়। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ মেলা।

চড়ক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে বড়াল পাড়ের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা এ পূজা ও মেলা দেখতে আসেন।

গত ২২ চৈত্র সন্ধ্যায় পাঠ ঠাকুরের পাটে ধুপ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। বোঁথর শিব মন্দির থেকে পাঠ ঠাকুর নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া হয়। ২৬ ও ২৭ চৈত্র ফুল ভাঙ্গা ও কালী নাচ শুরু হয়। পরে আসনে বসানো হয় প্রতিমা। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন ও পহেলা বৈশাখ মেলা বসে।

প্রায় ১৩ হাত লম্বা চড়ক গাছ পুকুর থেকে তুলে রাখা হয় মেলা প্রাঙ্গণে। পূজারীরা ফুল, দুধ, চিনি দিয়ে চড়ক গাছে পূজা দেন। মঙ্গলার্থে বাতাসা ছিটান মহাদেব মন্দিরের চালে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোড়ানো হয় চড়ক গাছ।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বান রাজার আমল থেকে এখন থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে থেকে বোঁথরে চড়ক পূজা হয়ে আসছে। মাখন সান্যাল নামক একজন কাঠ ব্যবসায়ী প্রথম চড়ক গাছ প্রতিস্থাপন করেছিলেন। ভারতের আসাম থেকে তিনি কাঠ কিনে আনতেন। একবার তার কাঠের মধ্যে চড়কগাছের আগমন ঘটেছিল বোঁথরে। মাখন সান্যালের স্ত্রীকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেবতা মহাদেব জানান চড়ক হয়ে তিনি এখানে এসেছেন। তাকে যেন স্থাপন করে পূজা দেওয়া হয়। কালো বর্ণের গাছটিতে গরুর পায়ের ক্ষুর ও কোচের চিহ্ন রয়েছে।

সেই তখন থেকে স্যান্যাল, আচার্য্য, হলদার, সুত্রধর পরিবার এ পূজা শুরু করেন। ভরন চালান, কালী নাচ, পাঠাবলী, ফুল ভাঙ্গা, হাজরা ছাড়াসহ আরও অনেক আনুষ্ঠানিকতা হয় এ পূজাকে ঘিরে। কালক্রমে অন্যান্য ধর্মের উৎসুক মানুষও এ মেলায় আসতে শুরু করেন। এখন মেলাটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। পূজা উপলক্ষে মেলায় নাগরদোলাসহ বিনোদনের অনেক উপকরণ পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।

চাটমোহর পৌর সদরের আফ্রাতপাড়া মহল্লার সন্তোষ শীল জানান, দেশ-বিদেশের অনেক ভক্ত এ মেলায় আসেন। মনের বাসনা পূরণার্থে অনেক ভক্ত মানত করে থাকেন। কেউ পাঠাবলী দেন, কবুতর উৎসর্গ করেন, কেউবা পূজার অর্ঘ সাজানো ভরণ চালুন দেন। চালুন মাথায় দিয়ে মন্দিরের চার পাশ দিয়ে সাতপাক ঘুরে সাজানো চালুন মন্দিরে দিয়ে দেন। মেলা উপলক্ষে মেয়ে জামাই নাইয়রে আসে। দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজন আসে। মেলার কদিন বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।

মহাদেব মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা জানান, চড়ক পূজা ও মেলা উৎসব এবার যথাযথভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। আগামী ১৪ এপ্রিল গোধুলী লগ্নে বড়াল নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজা ও মেলা। সুষ্ঠুভাবে মেলা উদযাপনে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চেক প্রজাতন্ত্র / দুই ট্রেনের সংঘর্ষে আহত প্রায় অর্ধশত

এই ৫ লক্ষণ দেখলেই বুঝবেন কিডনি ক্যানসারে ভুগছেন

আগামী ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে ‘গণভোট আইন’ করা হবে : আইন উপদেষ্টা

এক দিনে ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪৫

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইনকিলাবকে হারিয়ে কালবেলার দ্বিতীয় জয়

স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে লায়ন কল্লোলের হাইজিন ক্যাম্পেইন শুরু

খেজুর গাছ থেকে পড়ে শিবির নেতার মৃত্যু

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, আবেদন অনলাইনে

কায়সার কামালের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন ছাত্রলীগ নেত্রী

সাভারে তারেক রহমানের জন্মদিনে মানবিক সেবা

১০

আবারও ‘জেন-জি’ বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, কারফিউ জারি

১১

‘মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে আধুনিকভাবে শিক্ষিত হতে হবে’

১২

টুর্নামেন্টে নিম্নমানের পুরস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

১৩

শঙ্কা দূর না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয় : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

১৪

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না বাংলাদেশ : দিল্লিতে নিরাপত্তা উপদেষ্টা

১৫

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দশমবার শপথ নিলেন নীতিশ কুমার

১৬

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ রপ্তানি বন্ধ

১৭

সাকিব আল হাসানকে দুদকে তলব

১৮

হাজিরা দিতে এসে ছাত্রদল নেতা রক্তাক্ত 

১৯

মেজর সিনহা হত্যা / ওসি প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় প্রকাশ

২০
X