আগামী বুধবার থেকে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার (১৬ জুলাই) সিলেটে বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের এক সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী এ ঘোষণা দেন।
ওসমান আলী বলেন, ‘সিলেটের তিনটি রুটে জৈন্তিয়া ১৭ পরগনা সালিশ সমন্বয় কমিটির বাধার কারণে বাস-মিনিবাস চলাচল করতে পারছে না। এ অবস্থায় পরিবহন শ্রমিকদের দাবি না মানলে আগামী বুধবার ভোর থেকে সিলেটজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করা হবে।’
গত ৭ জুলাই রাতে সিলেটের জৈন্তাপুরে বাসচাপায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর জৈন্তিয়া ১৭ পরগনা সালিশ সমন্বয় কমিটির আহ্বানে সিলেট-তামাবিল-জাফলং, সিলেট-কানাইঘাট ও সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রতিবাদে জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন গত ১২ জুলাই জেলাব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিলেও জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে ঠৈকের পর তা প্রত্যাহার করে নেন।
কিন্তু জৈন্তাপুরবাসীর প্রতিরোধের মুখে বাস চলাচল করতে না পারায় আবারও জেলাজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি ময়নুল ইসলাম। তিনি জানান, আগামী বুধবার (১৯ জুলাই) ভোর থেকে এ কর্মবিরতি পালন করবেন পরিবহন শ্রমিকরা।
গত ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় বাসের ধাক্কায় একটি ইজিবাইকের (টমটম) পাঁচ যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনার পর দিন ৮ জুলাই (শনিবার) রাতে দরবস্ত বাজার মসজিদে সিলেটের বৃহত্তর জৈন্তাপুর ১৭ পরগনার সালিশ সমন্বয় কমিটি জরুরি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে সিলেট-তামাবিল সড়কে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ছাঁটাইয়ের দাবি জানানো হয়। ছাঁটাইয়ের আগ পর্যন্ত ওই সড়কে বাস-মিনিবাস চলাচল করতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, ‘ আমাদের দাবি তিনটি। ৭ জুলাইয়ের দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া ও আহতদের সহযোগিতা করা, সিলেট-তামাবিল সড়ক থেকে লাইসেন্সবিহীন-অদক্ষ বাসচালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রত্যাহার এবং ১৭ পরগনার কাছে শ্রমিক ও মালিক সমিতির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আহ্বানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমরা শুধু প্রথম দুটি দাবি পেশ করি এবং পরিবহন শ্রমিক নেতারা তা মেনে নেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি। ফলে আমরা এসব রুটে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস বর্জন অব্যাহত রেখেছি।’
এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে বৃহত্তর জৈন্তাপুরের বাসিন্দারা সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস চলাচলে বাধা দেন। এ ঘটনায় পাল্টা কর্মসূচি দেন জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। ওইদিন বিকেলে তারা বৈঠক করে সিলেট-তামাবিল সড়কে সোমবার (১০ জুলাই) ভোর থেকে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
গত সোম ও মঙ্গলবার এই দুই দিন সিলেট-তামাবিল সড়কে কর্মবিরতি পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এই দুদিনে তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় আগামী বুধবার ভোর থেকে সিলেটে আবারও কর্মবিরতির ডাক দেন তারা।
জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস-মিনিবাস যাত্রীরা বর্জন করছেন। সিলেট থেকে আমাদের বাসগুলো যাত্রী নিয়ে গেলে দরবস্ত বাজারে যাওয়ামাত্র স্থানীয়রা গাড়ি আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। এর প্রতিবাদে আমরা আগামী বুধবার থেকে জেলাজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছি।’
মন্তব্য করুন