মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু ইয়াসিন জানে না মা বাবা তাকে ছেড়েই চলে গেছে বহুদূরে। সে জানে না আর কোনো দিন ফিরবেন না তার বাবা মা। মা বাবার মৃত্যুর পরে নানির কোল ছাড়া আর কারও কোলে যাচ্ছে না সে। প্রচণ্ড ভীতসন্ত্রস্ত শিশু ইয়াসিন মানুষ দেখলেই প্রচণ্ড কান্না করছে। আর বাবা বাবা মা বলে ডাকছে।
মঙ্গলবার সকালে ফরিদপুর ঢাকা খুলনা মহাসড়কে কানাইপুরের দিপনগর এ্যাবলুম ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বাস-পিকআপ সংঘর্ষের সময় অল্পের জন্য বেঁচে যায় শিশু ইয়াসিন শেখ (১৮ মাস)।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) ইয়াসিনের নানাবাড়ি আলফাডাঙ্গার হিদাডাঙ্গা গ্রামে গেলে ইয়াসিনকে তার নানির কোলে দেখা যায়। পাশে ছিল তার নানা। শিশুটির কান্নায় যেন দেখতে আসা স্বজনদেরও চোখের পানি ঠেকানো যাচ্ছে না। একমাত্র আদরের মেয়ে ও জামাইকে হারিয়ে ইয়াসিনের নানা নান্নু আলীও ভেঙে পড়েছে। কারও সাথে কোনো কথা বলছে না।
স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় পিকআপে বাবা মায়ের সাথে ইয়াসিনও ছিল। ঢাকা থেকে মাগুরাগামী ইউনিক বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে তাৎক্ষণিক ইয়াসিনের বাবা ইকবাল তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় পাশের ঝোঁপ ঝাড়ে, এ সময় আশপাশে থাকা লোকজন শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শিশুটি মাথার ডান পাশে সামান্য চোট পেয়েছে বলে জানা যায়; তবে সে শঙ্কামুক্ত।
ঘটনাস্থলে নিহত হয় ১১ জন, হাসপাতালে মারা যায় আরও দুজন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যায় শিশু ইয়াসিনের বাবা ইকবাল শেখ (৩২)। বুধবার রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তার মা পপি পারভীন (২৪)। জোহর নামাজের পরে পপিকে তার বাবার বাড়ি হিদাডাঙ্গা গ্রামে দাফন করা হয়েছে এবং ইকবালকে গতকাল মাগরিবের নামাজের পরেই বোয়ালমারী উপজেলার রুপপাত ইউনিয়নের কুমড়াইল গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পিকআপ ভ্যানে মোট যাত্রী ছিল ১৮ জন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শিশু ইয়াসিন ছাড়া আরও দু’জন জীবিত আছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তারা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান ৬২ হাজার ৫শ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়াও গতকাল জেলা প্রশাসন থেকে নিহত প্রত্যেককে ৫ লাখ এবং আহত প্রত্যেককে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।
মন্তব্য করুন