কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতি পূর্বপাড়া-কুরাখাল কান্দা গ্রামে সায়মন হোসেন নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ৫০০ বছরের পুরোনো খাল ভরাট করে নিজের বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধামতি পূর্বপাড়া-কুরাখাল কান্দা খালটি ভরাটের কাজ করছেন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। তারা বলেন, খাল ভরাটের জন্য আমাদের আনা হয়েছে, তাই ভরাটের কাজ করছি। তবে এটি সরকারি খাল। এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে অভিযুক্ত সাইমনকে খাল ভরাটস্থলে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা সাইদুর রহমানকে পাওয়া গেলেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত চলে যান।
ধামতি পূর্বপাড়া ও কুরাখাল গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, এ খালটি ৫০০ বছরের অধিক পুরোনো। এ খালে এক সময় নৌকা চলাচল করত। বর্তমানে খালের মধ্যে বাঁধ দেওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে প্রায় ২০০ একর ফসলের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা চরম দুর্ভোগে পড়ব। জলাবদ্ধতা নিরসনসহ খাল ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ধামতি পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সেক্রেটারি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর আগে সায়মন খাল ভরাটকালীন তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. গিয়াস উদ্দিন খালের মাটি সরাতে নির্দেশ দিলে তারা সরিয়ে ফেলেন। বর্তমানে আবারও খাল ভরাটের কাজ করছেন তিনি। এতে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি দখল করায় আশপাশের অন্তত ৭ থেকে ৮ গ্রামের মানুষের প্রায় ২০০ একর জমিতে পানি জমে থাকবে। এতে জমিগুলো অনাবাদী হয়ে পড়বে। কৃষকের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জুনাব আলী ও আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ খাল দিয়ে একসময় নৌকা চলত। বর্ষা মৌসুমে জোয়ার-ভাটার পানির সঙ্গে পলি এসে জমির উর্বরতা বাড়াত, কৃষি জমির সেচ কাজ চলত এ খালের পানি দিয়ে। পুরোনো খালটি ভরাট করলে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সায়মনের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, এটি ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ভরাট করা হয়েছে। তবে মাটির নিচে দুটি পাইপ দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে ধামতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মিঠু বলেন, সায়মনের বাবা সাইদুর রহমান রাস্তার মেরামতের কথা বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক লাখ টাকারও কিছু কম টাকা নিয়ে যায়। তবে তারা যে সরকারি খাল ভরাট করবে তা জানতাম না। এটি অনিয়ম হয়েছে, আমি নিজেও অনিয়ম পছন্দ করি না।
দেবিদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম বলেন, প্রবাহমান এ খালটি উন্মুক্ত করার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি খাল থেকে মাটি তুলে নিতে। যদি দুই-এক দিনের মধ্যে মাটি তুলে না নেয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন