জন্মের পর পা বেঁকে যাওয়ায় বাকী ৮-১০টা শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবে বড় হচ্ছিল না ইসরাত জাহান সুইটি। তাইতো শিশু বয়সেই কপালে জুটে প্রতিবন্ধীর তকমা। একে তো প্রতিবন্ধী, তার উপর শিশু বয়সেই হয় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ। যে কারণে বাবা-মায়ের আদর ও ভালোবাসাও ঠিকমতো জোটেনি সুইটির ভাগ্যে। হয়নি ঠিকঠাক চিকিৎসাও।
তবে জীবনে এতসব প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দমে যায়নি সুইটি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সংকল্পের বলে একে একে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে করেছেন মাস্টার্স পাস। শুধু তাই নয়, আসন্ন পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করছেন মাত্র ৩ ফুট উচ্চতার ইশরাত জাহান সুইটি।
ইসরাত জাহান সুইটির বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অনন্তরাম গ্রামে। ব্যক্তিগত জীবনে সুইটি একটি পুত্রসন্তানের জননী। স্বামী ওমর ফারুক একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটে চাকরি করেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে বিন্দু রক্তদান ও সমাজসেবা সংগঠন নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করেন। মূলত বৃহৎ পরিসরে মানুষের সেবা করতে এবং প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের বোঝা নয় সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ইশরাত জাহান সুইটি। পাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক সাড়াও।
ভোটাররা বলছেন, ইশরাত জাহান সুইটি একজন প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও মাস্টার্স পাস করেছেন। মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছেন। তাই তিনি অসহায় মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। তার যোগ্যতা অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে বেশি। তাই তারা সবাই এবার ইশরাত জাহান সুইটিকে তার প্রজাপতি মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
ভোটাররা আরও বলেন, সুইটিকে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইতে হবে না। তার জন্য মানুষের মনে যে ভালোবাসা, মায়া মহাব্বত সৃষ্টি হয়েছে মানুষ এমনিতেই তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।
সুইটিকে ছোটবেলায় আরবি পড়াতেন মিনা বেগম। তিনি বলেন, সুইটি অনেক মেধাবী ছিল। সে খুব শান্ত-শিষ্ট ভদ্র মেয়ে। মেয়েটা অনেক কষ্ট নিয়ে বড় হলো। ওর বাবা-মা আলাদা থাকে। তারপরও সে লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত এসেছে। সুইটি এ সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা সবাই তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করব।
সুইটির স্বামী ওমর ফারুক জানান, সুইটির মধ্যে মানুষের জন্য ভালোবাসা ও মানবিকতা দেখে তিনি তাকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর দুজন একসাথে মানুষের সেবা করেছেন। ইচ্ছে ছিল কখনো যদি সুযোগ আসে বৃহৎ পরিসরে মানুষের জন্য কাজ করবেন। এজন্য তিনি স্ত্রীকে ভোটে দাঁড়িয়ে দিয়েছেন। যেখানেই যাচ্ছেন মানুষ তাদের সাদরে গ্রহণ করছেন, ভালোবাসা পাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী ভোটাররা তার স্ত্রীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
ইশরাত জাহান সুইটি জানান, তার ছোটবেলা থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। পা বেঁকে যাওয়ায় বাকি ৮-১০টা শিশুর মতো তার শারীরিক বৃদ্ধি হয়নি। তবে তিনি কষ্ট পাননি। চেষ্টা করেছেন সমাজের ৮-১০টা স্বাভাবিক মানুষের মতো প্রতিষ্ঠিত হতে। তার নানা ২৯ বছর ইউপি সদস্য ছিলেন। তার মাও ইউপি সদস্য ছিলেন। তিনি তাদের দেখে অনুপ্রাণিত। এ ছাড়া তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করে আসছেন। তিনি অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এতদূর এসেছেন। চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। তবে মানুষের জন্য কাজ করতে তার খুব ভালো লাগে। এই ভালো লাগা থেকে ও প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের বোঝা নয় সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি নির্বাচন করছেন।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই হিসেবে ভোটের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এই নির্বাচনে ইশরাত জাহান সুইটির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। সুইটির প্রত্যাশা, যেভাবে তিনি ভোটারদের ভালোবাসা পাচ্ছেন। ইনশাআল্লাহ, ভোটের দিন সবাই তাকে প্রজাপতি মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
মন্তব্য করুন