বরগুনার তালতলীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু।
বুধবার (৮ মে) বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক মো. মশিউর রহমান খাঁন মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পিবিআইকে তদন্তপূর্বক সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে মামলার বাদীর মেয়ের মোবাইল ফোনে প্রেম হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান বাচ্চু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু পরে চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে না করে টালবাহানা করতে থাকে।
পরে ভুক্তভোগী বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে করবে বলে স্ট্যাম্পে লিখিত দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতে শুরু করে। এ সময় গোপনে মোবাইলে ছবি ধারণ করে চেয়ারম্যান। ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মামলার ২নং আসামি পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারও দৈহিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন। চেয়ারম্যান রাজ্জাক তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন এবং তিনিও মোবাইলে ছবি ধারণ করে রাখেন।
পরে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারও ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করে। তার কথা না শুনলে তাকে জীবননাশের হুমকি দেন। নিরুপায় হয়ে ধর্ষিতা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে বাধ্য হয়। তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ধর্ষণের শিকার নারী তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করবে বলে হুমকি দেয়।
এমন খবর পেয়ে তিন চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিলে ওই ধর্ষিতার বিরুদ্ধে উল্টো পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দেয়। ওই মামলায় ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে ওই মামলায় ধর্ষিতা জেলহাজতে রয়েছে।
এ ঘটনায় ধর্ষিতার বাবা বুধবার বরগুনা নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তালতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু ও পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠুর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক মো. মশিউর রহমান খাঁন মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পিবিআইকে তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে আমার প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমার ও অন্য দুই চেয়ারম্যানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আনিচুর রহমান মিলন বলেন, আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পিবিআইকে তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন