যেকোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন সঠিক কর্মপরিকল্পনা। আর তা নির্ভর করে সুন্দর কর্ম পরিবেশের ওপর। কেননা, সুন্দর পরিবেশ বাড়িয়ে দেয় মানুষের মনোযোগ ও কর্মস্পৃহা। বাড়ে উৎপাদনশীলতা। কিন্তু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে উপজেলা পর্যায়ের অন্য সব অফিসে চাকচিক্য এবং সুন্দর কর্মপরিবেশ বজায় থাকলেও কর্মপরিবেশ নেই কেবল বন বিভাগ অফিসের। রয়েছে কেবল ভাঙাচোরা ছোট্ট একটি টিনশেড পাকা ঘর ও টেবিল, চেয়ার। ফলে ঠিকমতো অফিসে আসেন না বন কর্মকর্তাও। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে। ঠিক যেন সেই প্রবাদ বাক্য ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃ ক্রোড়ে’ এর মতো অবস্থা।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলা পরিষদের জমিতে করা বন বিভাগের এ অফিসের আওতায় ১৯৯০ সাল থেকে চলছে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি। উপজেলার ছাপড়হাটি ও তারাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তায় বনায়ন কর্মসূচির আওতায় লাগানো হয়েছে মেহগনি, আকাশমনি, অর্জুনসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ ঔষধি গাছ। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ সালে ছাপড়হাটিতে ৫ সিডলিং কিলোমিটার ও তারাপুরে ৯ সিডলিং কিলোমিটার এবং ২০১৭-১৮ সালে তারাপুরের চর খোদ্দায় লাগানো হয়েছে ১৫ সিডলিং কিলোমিটার গাছ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাপুরের গাছগুলো বেশ বড় হয়েছে। সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে সেগুলো মহীরুহে পরিণত হবে। মাঠে কাজ করা কৃষকদের দেবে ছায়া। হবে দেশের সম্পদ।
বন বিভাগ অফিসের বাউন্ডারিতে দেখা যায়, ঘরটির ভেতরের ওয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। ওপরে ভাঙাচোরা টিনের চাল। রুমে রয়েছে সেকেলে একটি টেবিল ও চেয়ার। চারপাশে গজিয়েছে বিভিন্ন আগাছা। দুই পাশে চারা উৎপাদন ও বিক্রয়-বিতরণের জন্য চলতি বছরে দেওয়া হয়েছে মেহগনি, আকাশমনি, অর্জুনসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ ঔষধি গাছের ৫ হাজার চারা। চারাগাছে পানি দেওয়ার জন্য যে পানির ট্যাংকারটি রয়েছে সেটিও অচল। ফলে সকাল-বিকেল সেচ দেওয়া হয়ে পড়েছে কঠিন। সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে রুগ্ণ হচ্ছে চারাগুলো। সম্প্রতি বন বিভাগ অফিসের এমন করুণ চিত্রের একটি ছবি পোস্ট দেন সম্প্রতি এক ফেসবুক ব্যবহারকারী। পোস্টের কমেন্ট বক্সে মিজানুর রহমান নামের একজন স্থানীয় লিখেন ‘অফিস না কি ভূতের বাড়ি!’
মিজানুর রহমান বলেন, চাল ভাঙা, চারপাশে আগাছায় ভরা সবমিলিয়ে অফিস তো নয়, যেন ভুতের বাড়ি। এর থেকে পরিত্রাণের আশাও করেন তিনি।
উপজেলা বন কর্মকর্তা খন্দকার মেহেদী হাসান বলেন, অফিসটি বন বিভাগের নিজস্ব জায়গায় নয়, ফলে এই দুর্দশা। তবে জমি কেনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম শরিফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, উপজেলা অফিসের জন্য নিজস্ব কোনো জমি নেই। আর বরাদ্দ না থাকায় কিবা করার আছে আমাদের।
দেশকে সবুজে আচ্ছাদিত করার মাধ্যমে মানুষ যাতে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারেন সেজন্য বন বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলোর দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন বলে প্রত্যাশা প্রকৃতিপ্রেমীদের।
মন্তব্য করুন