কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই এই সময়টায় কামার পল্লীগুলোতে বিরতিহীন বাজতে শোনা যায় হাতুড়ি সংগীত। টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকে কামার পল্লীগুলো। তবে এ বছর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার কামার পল্লীগুলোতে আগের সেই হাতুড়ি পেটার শব্দ নেই।
সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক মেশিনে তৈরি সরঞ্জামে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় কামারশিল্পে পড়েছে ভাটা। আর তার ফলে এবার এই উপজেলার কামারপল্লীতে নেই ঈদের আমেজ। যদিও এক সময় কোরবানির ঈদের দুয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকতো কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার কামারপাড়া। পেশায় ভাটা পড়ায় দিন দিন কামার শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় পাওয়া পেশা ছেড়ে খুঁজে নিচ্ছেন অন্য পেশা। এতে এই শিল্পটি হারানোর মুখে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামার পাড়া ঘুরে কামার শিল্পীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন কামার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদের আর মাত্র সপ্তাহ খানেক বাকি থাকলেও কামার দোকানগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। বছরে একবারই ভালো ব্যবসার আশায় বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা কামার শিল্পীরা ক্রেতাদের আসার প্রহর গুনছেন। আশানুরূপ বিক্রি নেই বলে মন ভালো নেই কামার শিল্পীদের। কামার শিল্পীরা জানান, পৃথিবী আধুনিকায়নের ফলে সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। মেশিনের আওতায় এসেছে অনেক শিল্প। এখনকার সমসাময়িক বাজার আধুনিক মেশিনে তৈরি ছুরি, দা, বঁটি, চাপাতি, টাক্কলে ছেয়ে যাওয়ায় কামার শিল্পে ভাটা পড়েছে। গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত আধুনিক এসব পণ্য সহজলভ্য হওয়ায় এখন আর কেউ অর্ডার দিয়ে কামারের দোকান থেকে এসব পণ্যসামগ্রী খুব বেশি একটা তৈরি করে না। যে কারণে এই পেশার সঙ্গে জড়িত কামার শিল্পীরা কেউ ভালো নেই। অনেকেই এ পেশা বদলে চলে গেছেন ভিন্ন পেশায়। তবে এখনো যারা এই পেশা ধরে আছেন তারা কেবল বংশপরম্পরায় পাওয়া পেশার সম্মানার্থে এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন।
উপজেলার সাহেবাবাদ বাজারের কামার শিল্পী শুধাংকর কর্মকার কালবেলাকে বলেন, বংশপরম্পরা ধরে রাখতেই এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছি। বাজারের আধুনিক পণ্যসামগ্রীর প্রসারে আমাদের তেমন বিক্রি নেই। আমি ছোটবেলায়ও দেখেছি, আমার বাপ-চাচারা এরকম ঈদ মৌসুমে শ্বাস ফলার ফুরসত পেত না। দিন-রাত টানা পরিশ্রম করেও ক্রেতার চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হতো। তবে বর্তমান বাজার এসব আধুনিক পণ্যসামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। আমার সঙ্গের অনেক কামার দোকানি এখন অন্য ব্যবসা করছেন। কেউ বা আবার জড়িয়ে পড়ছেন অন্য পেশায়।
উপজেলার চান্দলা বাজারের কামার শিল্পী দেবাশীষ কর্মকার কালবেলাকে জানান, আধুনিক যন্ত্রপাতির দখলে বাজার হওয়ায় এখন আর কদর নেই কামারশিল্পীদের। সারাবছর যেমন তেমন এই ঈদেও তাদের হাতে তেমন কাজ নেই। দিন দিনই তাদের ব্যবসার পরিসরটা ছোট হয়ে আসছে।
ব্রাহ্মণপাড়া সদরের পশ্চিম বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজল সরকার কালবেলাকে বলেন, একসময় কোরবানির ঈদের আগের এই সময়টায় কামার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যেত। তবে দিন দিন আধুনিক মেশিনে তৈরি গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত পণ্য বাজার দখল করে নেওয়ায় কামারদের ব্যবসা সারা বছরই মন্দ যায়। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর তাদের ব্যবসায় কিছুটা জোয়ার দেখা গেলেও এ বছর তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে পুরোনো যন্ত্রপাতি শাণ দিতে অনেকেই কামারদের কাছে আসছেন।
মন্তব্য করুন