সরকারি গাছ কাটতে গেলে উপজেলা পরিষদের রেজুলেশন, টেন্ডার ও বন বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মোরাদ আলী তার সরকারি বাসভবনের সীমানার ভেতরে গাছ কাটছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই গাছ কাটার জন্য তিনি বনবিভাগের কোনো অনুমতিও নেননি। তবে ইউএনওর দাবি, ঘূর্ণিঝড় রিমালে একটা পড়ে যাওয়া গাছ কাটা হয়েছে, কিন্তু কারণ ছাড়া কোনো গাছ কাটেননি।
সদরপুর উপজেলা পরিষদ ভবনের পাশেই সতেরো রশি এলাকায় বাজারের পাশেই উপজেলা চেয়ারম্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসভবনের সারিতেই রয়েছে ইউএনওর বাসভবন। এই সরকারি কোয়াটারের সীমানার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ। সীমানাপ্রাচীর থাকার কারণে এর ভেতরে কোনো গাছ কাটলে বাইরে থেকে তেমন বোঝা যায় না। গত রোববার দিবাগত রাতে একটি সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে, এই সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে অর্ধশত বছরের পুরোনো একটি বড় মেহগনি, একটি রেইনট্রি গাছ কাটা হয়। মঙ্গলবার (১২ জুন) সকালে গাছের গুঁড়িগুলো টুকরা টুকরা করা হচ্ছিল। সূত্রটি জানায়, বাসার আসবাবপত্র তৈরির জন্য এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
বিকেলে কালবেলার প্রতিবেদক এই কাটা গাছের ছবি নেওয়ার জন্য গেলে ইউএনওর বাসভবনে ডিউটিরত আনসার সদস্যরা ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এরপর দেয়ালের ওপরে উঠে গাছ কাটার ছবি ধারণ করা হয়। সে সময় দেখতে পাওয়া যায় ভেতরে গাছগুলো করাত দিয়ে কয়েকটি টুকরা করে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস ছাত্তার ফকির বলেন, আমি যখন ১০ বছর আগে এই কোয়াটারে থাকতাম তখনই ওই গাছটি অনেক বড় ছিল। আমি তখন অনেক গাছ লাগিয়েছি এবং পরিচর্যা করেছি। তা ছাড়া ঝড়-তুফানে উপড়ে পড়া কত কত সরকারি গাছ মাটিতে পড়ে থাকছে বছরের পর বছর, অনুমোদন ও আইনি জটিলতায় কেউ কেটে নেওয়ার সাহস দেখায় না। আর ইউএনও মোরাদ আলী ইচ্ছেমতো নিধন করছেন সরকারি গাছ। পাওয়ার কী জিনিস!
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদরপুর ইউএনও সৈয়দ মোরাদ আলী দাবি করেন তিনি কোনো গাছ কাটেননি।
কাটা গাছের ছবি থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিমাল ঝড়ের সময় একটি গাছ পড়ে গিয়েছিল, সেটিই সরানোর কথা। গাছ তো কাটার কথা নয়।
নিজের বাড়ির আসবাবপত্র তৈরির জন্য গাছ কাটার অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, তিনি তো এখানে স্থায়ীভাবে থাকেন না। আসবাবপত্র কী করবেন। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি দেশের বাড়ির জন্য নাকি আসবাবপত্র বানানো হবে তার জন্যই নাকি গাছ কাটা হচ্ছে, এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এ অভিযোগ একদম সঠিক নয়।
গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, বন বিভাগের কোনো অনুমতি তিনি নেননি।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কুদ্দুছ ভূঁইয়া বলেন, ইউএনও তার বাসভবন থেকে গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। যেহেতু গাছগুলো ইউএনও কোনো অনুমতি ছাড়া কেটেছেন, সেহেতু তিনি আইন আইন-বহির্ভূত কাজ করেছেন। একজন আইনের শাসক হয়ে এটি তার দ্বারা কাম্য নয়।
মন্তব্য করুন