গোপালগঞ্জে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে চুরির ঘটনায় ৫ জনের নাম এবং অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় এ মামলাটি দায়ের করেন পার্কের ম্যানেজার মো. সারোয়ার হোসেন।
এদিকে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সার্বিক তদারকির লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হারুন-অর-রশিদ মামলা ও দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. নূর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামীরা হলেন- মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার নাটাখোলা গ্রামের ক্ষোপা মজুমদারের ছেলে সজীব মজুমদার (৩৩), একই গ্রামের গনেশ রায়ের ছেলে সুব্রত রায় (২৩), সুনিল সেনের ছেলে অনিমেষ সেন (৩০), গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীতলা টুঠামান্দ্রা গ্রামের বিপ্লব বল (৪০) ও একই গ্রামের সঞ্জয় বল (২৮)। এ ছাড়া এ মামলায় আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, বুধবার (১২ জুন) রাতে সাভানা পার্কের ৩টি কম্পিউটারের সিপিইউ ও একটি মনিটর চুরি হয়। পরে পার্কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখে আসামিদের শনাক্ত করে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় মামলার বাদী সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে থানায় জমা দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষে দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সার্বিক তদারকির লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. নূর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জের আওতাধীন সব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকি ও রিসিভারগণ কর্তৃক পার্কের সামগ্রিক কার্যক্রমসহ যাবতীয় বিষয়াদি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর ১৮গ(৩) বিধি অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলমকে আহ্বায়ক ও গোপালগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমানকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- পুলিশ সুপার আল-বেলি আফিফা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী দেবপ্রসাদ পাল, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান, গোপালগঞ্জ আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ডান্ট মো. ফজলে রাব্বী।
পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, উক্ত কমিটিকে বর্ণিত রিসোর্ট ও পার্কে সব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকি এবং রিসিভারগণ কর্তৃক পার্কের সামগ্রিক কার্যক্রমসহ যাবতীয় বিষয়াদি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। কমিটি তাদের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে কমিশনকে অবহিত করবে।
র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিপি থাকাকালীন সময়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ৬২১ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক। এ পার্কে জমির প্রায় সবই হিন্দু সম্প্রদায়কে ভয় দেখিয়ে ও জোর করে দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
গত ৭ জুন রাতে আদালতের নির্দেশে জমি ও সড়ক দখলসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জে করা সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে রিসিভার নিয়োগ করে নিয়ন্ত্রণ নেয় জেলা প্রশাসন। ওই দিন রাতেই গোপনে পার্ক থেকে ধরা ৫৯০ কেজি মাছ বিক্রি করার সময় হাতেনাতে মাছ জব্দ করে দুদক। পরে মাছ বিক্রি করে ৮৩ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গোপনে মাছ বিক্রির দায়ে ৮ জুন পার্কের মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের নামে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন দুদকের গোপালগঞ্জে উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান।
মন্তব্য করুন