মেঘনার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়ছে চাঁদপুরের হাইমচরের চরভৈরবী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জালিয়ার চরবাসী। নদীভাঙনের এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে তারা সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকালেও স্রোত বাড়ায় নদীতীর ভাঙতে দেখা যায়। এতে স্থানীয়রা সমাধান পেতে সবার সুদৃষ্টি চেয়ে ভাঙন ঠেকাতে মানববন্ধন করেছে।
স্থানীয়রা বলেন, বর্ষার শুরুতে নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমাদের জালিয়ার চরবাসীর দুঃখ-দুর্দশা। নদীভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। ৫-৬ বার ভাঙনের কবলে পড়ে মাথা গোঁজার শেষ ভরসাটুকু হারিয়ে ফেলার হতাশায় দিশেহারা আমরা।
জানা যায়, ২০০৮ সালে চাঁদপুর-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে জয়লাভের পর স্থানীয় সাংসদ ডা. দীপু মনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাইমচরের বাংলাবাজার থেকে শহর আলী মোড় এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেন। তবে চরভৈরবী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কাটাখালীর দক্ষিণ পাশের মহসিন হাওলাদারের বাড়ি থেকে মানিক সর্দারের ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে চরভৈরবীর ৯নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু ইউসুফ বেপারি বলেন, হাইমচরে আমরা জালিয়ার চরবাসী সবচেয়ে অবহেলিত। পুরো হাইমচর জুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হলেও আমাদের এই ৫০০ মিটার জায়গাতে কোনো বাঁধ নেই। যার কারণে প্রতিনিয়ত মেঘনার ভাঙনের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমাদের মাথা গোঁজার শেষ জায়গাটুকু। তাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সবার সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনতিবিলম্বে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের রক্ষা করুন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী তিন সন্তানের জননী হালিমা বেগম বলেন, ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে নদীভাঙন আতঙ্কে দিন কাটে আমাদের। রাতে ঘুমাতেও ভয় লাগে। স্বপ্নের মধ্যে দেখি নদী ভেঙে বাড়িঘর নদীর মাঝখানে চলে গেছে। যেই বয়সে ছেলেমেয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা, সেই বয়সে এই ছোট ছোট ছেলেমেয়ে সারা দিন ভিটেমাটি হারানোর ভয়ে আতঙ্কে থাকে। বারবার জিজ্ঞাসা করে, ‘মা, আমগোরে কি নদী ভাইঙ্গা লইয়া যাইবো?’ আমরা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই, আমরা নদীভাঙন থেকে বাঁচতে চাই, আমরা স্থায়ী বাঁধ চাই।
বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, জালিয়ারচরের নদী ভাঙনের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কাছ থেকে দেখেছি। বাঁধটি নির্মাণ হলে মানুষ নিজ ভূমিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে উদ্যোগ নেব।
মন্তব্য করুন