ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একটি ছোট অংশ মাহালী জনগোষ্ঠী। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৩ শতাধিক পরিবার রয়েছে এ জনগোষ্ঠীর। যাদের বেশিরভাগই ভূমিহীন ও হতদরিদ্র। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বাঁশের পণ্য তৈরি। এক সময় বাঁশের তৈরি কুলা, চালা, ডালা, ধামা ছাড়া গ্রামগঞ্জে গৃহস্থালি কাজ চলত না। ব্যাপক চাহিদার কারণে সারা বছর ব্যস্ত সময় পার করতেন মাহালীরা। তাদের জীবনযাপন ভালোই চলছিল। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ তাদের তৈরি পণ্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে পরিবেশ বিঘ্নকারী বিভিন্ন প্লাস্টিক ও পলিমারের পণ্য। ফলে দিন দিন এ জনগোষ্ঠী হয়ে পড়ছে বেকার। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে পেশা পরিবর্তন করলেও বেশিরভাগ মাহালী অন্য কোনো কাজ না জানা থাকায় বাধ্য হয়েই বাপ দাদার পেশায় রয়ে গেছে। কিন্তু এ পেশায় চলছে না তাদের সংসার। লেখা পড়ার ব্যয় চালাতে পারছেন না তাদের সন্তানদের। এরপরেও বাপ দাদার পেশা ছাড়তে চান না মাহালীরা।
উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের খালিপপুর মাহালী পাড়ায় প্রায় ৪০টি পরিবারের বসবাস। তারা সকলেই বংশানুক্রমে বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তারা বলেন, বাঁশের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রয় করে একজনের মজুরিও ভাগ্যে জোটে না। বাঁশের কাজের আয় থেকে সংসার পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে তাদের।
বৃন্দাবন চন্দ্র দাস জানান, বাজারে চাহিদা আছে এমন শৌখিন বাঁশের পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ ও সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হলে মাহালী জনগোষ্ঠী স্বাবলম্বী হতে পারবে এমন দারি তাদের। সন্তানদের লেখা পড়া শিখাতে পারবে। এগিয়ে যাবে মাহালী জনগোষ্ঠী।
রনি রানী বলেন, ছোট থেকে কাজ করে আসছি তাই তারা ছাড়তে চাই না, বাপ দাদার এ পেশা। বাপ দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার শুভ্র প্রকাশ চক্রবর্তী জানান, যাদের পুঁজি নেই এমন মাহালীদের সুদ মুক্ত ঋণ এবং দলিত ভাতা প্রদানের কাজ শুরু করা হয়েছে। আরও বরাদ্দের জন্য চাহিদা পত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল দরিদ্র মাহালীদের এর আওতায় আনা হবে। মাহালীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যও চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অচিরেই তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন