কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৭ এএম
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাবি শিক্ষক তাহের হত্যা : জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরে বাধা নেই

রাবি শিক্ষক ড. এস তাহের। ছবি: সংগৃহীত
রাবি শিক্ষক ড. এস তাহের। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর ফলে এই মামলার আসামিদের ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এন গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

শুনানিতে আবেদনের পক্ষের আইনজীবী এস এন গোস্বামীকে প্রধান বিচারপতি বলেন, একটা বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল রিভিউ সব শেষ হলো, অবজারভেশনে সব বলে দেওয়া হলো। তারপর আবার এটার বিরুদ্ধে রিট নিয়ে হাইকোর্টে গেলেন কেন? এখানে রিট করার কি কোনো সুযোগ আছে? এরকম কোনো ডিসিশন দেখাতে পারবেন?

জবাবে আইনজীবী এস এন গোস্বামী বলেন, মাই লর্ড এ রকম ডিসিশন নেই। তবে আমাদের আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে আসামিকে আটক ও আদালতে হাজিরের ক্ষেতে সংবিধানের বিধান মানা হয়নি।

তখন প্রধান বিচারপতি এই আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরের বিষয়টি তো আপিলের রায়ে উত্তর দেওয়া হয়েছে। তাহলে এখন এসে প্রসেসটাকে কে বাধাগ্রস্ত (ইন্টারআপ) করছেন? এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে একজন প্রফেসরকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো সেটা ৭১ সালের বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আগেও বলেছি যে, যখন আমরা কোনো বিচার করি তখন ঘটনাটা আমাদের সামনে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে অধ্যাপক তাহেরের লাশটি আমাদের সামনে, এমনটা দেখেই আমরা বিচার করেছি।

এ সময় বেঞ্চের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আইনজীবী এস এন গোস্বামীকে বলেন, ক্লায়েন্টকে সৎ পরামর্শ দেওয়াটাও কিন্তু একজন আইনজীবীর দায়িত্ব।

বেঞ্চের আরেক বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম এই আইনজীবীকে বলেন, আপনি যে বিষয়ে রিট করেছেন তার উত্তর তো রায়েই দেওয়া হয়েছে।

এরপর বেঞ্চের আরেক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ রকম বিষয় নিয়ে এসে আদালতের সময় নষ্ট করায় কস্ট করা উচিত। একপর্যায়ে আজকের আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক ড. তাহেরের মরদেহ। এর দুদিন পর ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুতবিচার আদালত চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনকে বেকসুর খালাস দেন। আসামিরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হাইকোর্ট দুই আসামির ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন।

অন্যদিকে সাজা কমিয়ে দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে সব আপিলের শুনানি শেষে গত ৫ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যায় হাইকোর্টের দেওয়া আগের রায়ই বহাল রাখেন।

এই রায়ের ফলে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড এবং নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে। পরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ আপিলের রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নাজমুল আলম ছাড়া অপর তিন দণ্ডিত আপিল বিভাগে (রিভিউ) আবেদন করলে গত ২ মার্চ সে রিভিউ খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তা নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি।

তবে একপর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে তার ভাই হাইকোর্টে রিট করলে গত ১৭ জুলাই সে রিট সরাসরি খারিজ করে দেন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এরপর এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। গত ২০ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়।

আবেদনে জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার সেই লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে তাদের ফাঁসি কার্কর করতে কোনো আইনগত বাধা রইল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উত্তেজনার মধ্যে চীন-আফগান-পাক বৈঠকে উঠে এল সাতটি বিষয়

ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই : হাইকোর্ট

পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে পুশইন

দুই ইসরায়েলিকে হত্যার পর ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দেন ওই যুবক

মানিকগঞ্জের আদালতে মমতাজ

রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা গুলিতে নিহত

সীমান্ত দিয়ে ২৪ বাংলাদেশিকে পুশইন

মেয়াদ শেষেও কাজ হয়নি অর্ধেক

সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার 

১০

ইরানে ভয়ংকর হামলা করতে প্রস্তুত ইসরায়েল

১১

কাকরাইলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাতভর অবস্থান

১২

নেতানিয়াহুর কারণে ডুবতে বসছে ইসরায়েল

১৩

‘৬ হাজার টাকার চাইল পাইতাছো, ২০০ টাকা দিতে কি সমস্যা?’

১৪

কাতারের বিলাসবহুল বিমান লুফে নিলেন ট্রাম্প

১৫

ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আদালতের আদেশ আজ

১৬

ভারতীয় গরু প্রবেশের শঙ্কায় দিন কাটছে খামারিদের

১৭

গাজার পথে হাজারো ত্রাণের ট্রাক আটকে রেখেছে ইসরায়েল

১৮

আজ কেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া 

১৯

ঈদুল আজহা : ট্রেনের ১ জুনের টিকিট বিক্রি আজ

২০
X