কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানার জন্য তনুর চাচাতো বোন এ মামলার সাক্ষী লাইজু জাহানকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তলব করেছে। আগামী ৩ আগস্ট সকাল ১০টায় কুমিল্লা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে তাকে ডাকা হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুলাই) রাতে জানান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার দক্ষিণ কল্যাণপুরের পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান এক চিঠির মাধ্যমে লাইজুকে তলব করেছেন।
ঘটনার দিন লাইজু কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুদের বাসায় ছিলেন। এর আগেও তাকে একাধিকবার নানা সংস্থা ডেকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
আরও পড়ুন : সিগারেটের সূত্র ধরে বিমল হত্যা রহস্যের উদ্ঘাটন
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে এ মামলার দায়িত্ব নেয় পিবিআই। দীর্ঘ আড়াই বছর পর ফের পিবিআইয়ের কোনো তৎপরতা শুরু হলো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা মামলাটি নিয়ে তৎপর রয়েছি। মামলার তদন্তের স্বার্থেই লাইজু জাহানকে ডাকা হয়েছে। এ জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অন্য সাক্ষীদেরও পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে। তদন্তকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা ডেকেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে পারব।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, লাইজু এখন সুনামগঞ্জের ছাতকে থাকেন। তাকে এর আগেও অনেকবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদেই ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার তদন্ত। মেয়ের খুনিরা এখনো অধরা। ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়।
আরও পড়ুন : পুলিশ, পিবিআই ও সাংবাদিক পরিচয়ে ডাকাতি করতেন তারা
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের ঝোপজঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় ২১ মার্চ বিকালে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে পাঁচবার এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো কিনারা করতে পারেনি বর্তমান তদন্ত সংস্থা পিবিআইও।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলামকে। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি এ কে এম মনজুর আলমকে। তৃতীয়বার ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি তদন্ত করেন।
এরপর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জালাল উদ্দিন আহম্মদ চার বছরের বেশি সময় এই মামলার দায়িত্বে ছিলেন।
সবশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি সিআইডি থেকে পিবিআই ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুর রহমান তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে গিয়ে তনুর বাবা, মা এবং ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছেন তিনি।
মন্তব্য করুন