ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এবং দুই বছর আগে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের নামে লুটপাট ও ডাকাতির অভিযোগ করে সাবেক মহা পুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদসহ ১৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় দুইটি অভিযোগ দায়ের করেছে বিএনপি।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে পল্টন মডেল থানায় বিএনপির ‘মামলা তথ্য ও সংরক্ষন’ বিষয়ক কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন খান বাদী হয়ে এই দুইটি মামলার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগসমূহ গ্রহণ করেছেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেন্টু মিয়া।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জানেন, ২০০৯ সাল থেকে ’২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ অফিসারা অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছে, হয়রানি করেছেন, আমাদেরকে গুম করেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের একটি ঘটনা নিয়ে এসেছি। হারুন অর রশিদ, মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার এরা আমাদের অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আমাদের অফিসের সব মালামাল নিয়ে যায়। প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকার মালামাল ডাকাতি করেছে। আর তিন লক্ষ ৫০ টাকার মালামাল নষ্ট করেছে। সেই সংক্রান্ত একটা মামলার অভিযোগ আজকে আমরা এখানে এফআইআর জমা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়টা ১৬ জুলাই। সেদিন ডিবির হারুন অর রশিদ ডিএমপির মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার দাস এরা অস্ত্র তৈরি করার হাতিয়ারসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র, গোলা বারুদ নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্যারের কক্ষে রাখে, তৃতীয় তলা অবৈধ বোম রাখে। একটা নাটক সাজিয়ে তারা বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। এই যে তারা (পুলিশ কর্মকর্তারা) অবৈধ অস্ত্র, গোলা বারুদ, বোম রাখল। কার্যালয়ের বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভয়ভীতি দেখাল তার একটি অভিযোগ নিয়ে আমরা এসেছি। আমরা ডিউটি অফিসার এসআই মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে ওসি সেন্টু মিয়া অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছেন। মামলা নম্বর ১ এবং ২।’
মামলা বিবাদীরা হলেন, পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা প্রধান) হারুন অর রশিদ, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারমী রেজাউল আলম, হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেররিমজম) আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার(ডিবি) খন্দকার নুরন্নবী, সনজিত কুমার রায়, যুগ্ম পুলিশ কমিশার (ডিএমপি) বিপ্লব কুমার দাস, মেহেদি হাসান, উপ পুলিশ কমিশনার (সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) তারিক বিন রশিদ, উপ পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল জোন) হায়াতুল ইসলাম খান, এডিসি (সোয়াট টিম) জাহিদুল ইসলাম, এসি (মতিঝিল জোন) গোলাম রুহানী, পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন মিয়া, এসআই (পল্টন মডেল থানা) মিজানুর রহমান।
ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ প্রবেশ করে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডাকাতি যাওয়া মালামালের মূল্য ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ৫২ হাজার ৫শ টাকা। এই অভিযোগ পুলিশ প্রধানসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়।
আরেকটি অভিযোগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সাদা পোশাকে সদস্যরা নয়া পল্টনের অফিসে প্রবেশ করে এবং বাইরে আওয়ামী লীগের স্বশস্ত্র ক্যাডাররা অস্ত্র-গোলা বারুদ, বাঁশের লাঠিশোটা, রড, পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তচনচ এবং অবৈধ অস্ত্র-সস্ত্র রেখে দেয়। তারা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ মহানগর নেতৃবৃন্দকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
এই অভিযোগ হারুন অর রশিদ ছাড়াও ডিএমপির ১৬ জন কর্মকর্তা নাম দেওয়া হয়। তারা হলেন, উপ পুলিশ কমিশনার মো. মহিদ কবির সেরনিয়াবাত, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. আফসার উদ্দিন খান, সাইফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার এরশাদুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক(নিরস্ত্র) কবির হোসেন চৌধুরী, এসআই মনিরুজ্জামান, নুরুল ইসলাম, ফরমান আলী, এএসআই স্বপন মিয়া, রেজাউল করীম, এরশাদ আলী, রবিউল ইসলাম, ইব্রাহিম শেখ, কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, মেহেদি হাসান মাসুদ। অভিযোগ দেওয়ার সময়ে সাবেক ছাত্র নেতা শরীফুল ইসলাম শাওন, তারেক আহমেদ ও মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন