হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে রাত ৮টার পর সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামছুল হক টুকু, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান (অব.) রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকত ছিলেন। পরে লালবাগ থানার খালিদ হাসান হত্যা মামলায় তাদের আদালতের ডকে তোলা হয়। শুনানি চলাকালে পলক দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে এবং চোখ বুঝে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক পর্যায়ে আসামি জয় বলতে চাইলেও উপস্থিত আইনজীবীরা তাকে থামিয়ে দেন।
এদিন আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়। সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় প্রত্যেককে গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। এ ছাড়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলায়ও সৈকতকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ আরও সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। রাত ৮টার পর পলকসহ অন্য আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। রাত ৮টা ৩৩ মিনিটে তাদের উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। আদালতের লোহার তৈরি ডকের সামনে টুকু দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার বাম পাশে ছিলেন জয়, সৈকত, আহমেদ ও সোহায়েল। তাদের পেছনে আসামি পলক দেয়াল ঘেঁষে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অন্য আসামিরা এদিক ওদিক তাকালেও পলক চোখ বুঝে শুনানি শুনছিলেন। শুনানি চলাকালে ৮টা ৩৯ মিনিটে নিজের হেলমেট খুলে ফেলেন জয়। তখন পুলিশ তাকে ফের হেলমেট পরিয়ে দেন। পরে ৮টা ৪২ মিনিটে দিকে আসামিপক্ষে শুনানির শুরু হলে আসামি টুকু মুচকি হাসতে থাকেন। শুনানির শেষ পর্যায়ে ৮টা ৪৮ মিনিটে জয় কথা বলার জন্য কয়েকবার হাত উঁচু করে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তবে আইনজীবীদের বাধার মুখে তিনি কথা বলতে পারেননি। তখন টুকু জয়কে কথা বলতে নিষেধ করেন। পরে জয় ডকের পেছনের দিকে পলকের পাশে গিয়ে দাড়ান। শুনানি শেষে আদালত মামলার তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তখন আইনজীবীরা এজলাস থেকে বের হয়ে যান। এ সময় আসামিরা নিজেরা পরস্পর কথা বলতে থাকেন। আদালত থেকে বের করা হলে পলক মাথা নিচু করে থাকেন।
শুনানিতে বিএনপির আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, পৃথিবীতে যা ঘটেনি পলক তাই ঘটিয়েছেন। তার নির্দেশনায় সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কখন নেট বন্ধ করা হয়, হত্যার পরিকল্পনা করলে। নেট, গ্যাস, পানি বন্ধ করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ইন্টারনেট অপরিহার্য। নেট বন্ধ করে দেয় যেন আন্দোলনকারীরা রাস্তায় না নামতে পারে। গণহত্যা করত পারে। যা সবচেয়ে গর্হিত, নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত। পৃথিবী থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়। জনগণের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই দায় তার।
উল্লেখ্য, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের এক মামলায় ফের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ মোবিন রাতুলকে হত্যাচেষ্টা অভিযোগে চকবাজার থানার মামলায় সৈকতের আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৪ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় ১২তম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন রাজধানীর পল্টনে কামাল মিয়া নামে এক রিকশাচালককে হত্যা মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় ২০ আগস্ট আরিফ খান জয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২০ আগস্ট রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে আহমদ হোসেন ও বনানী এলাকা থেকে সোহায়েলকে আটক করা হয়। পরদিন পল্টন থানায় যুবদল নেতা নবীন তালুকদার হত্যা মামলায় তাদের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
মন্তব্য করুন