কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিচারককে হেনস্তা

বিএনপির আইনজীবীদের সনদ বাতিলের দাবি জুডিশিয়াল সার্ভিসের

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের আসামিকে জামিন না দেওয়ার ঘটনায় কোর্ট রুমের কজলিস্ট ছুড়ে ফেলা ও বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমসহ ৫ আইনজীবীর সনদ বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

রোববার (১৮ মে) এক প্রেস বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

বাকি আইনজীবীরা হলেন- জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মিলন, ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের প্রাথমিক সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাবেদ, অ্যাডভোকেট এসএম ইলিয়াস হাওলাদার ও অ্যাডভোকেট মো. জহিরুল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গভীর ক্ষোভ ও চরম উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, গত ১৭ মে দুপুরে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলমান এজলাসে কিছু আইনজীবী কর্তৃক বিচারক ও বিচারকার্যের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা, চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য, কোর্টরুমের কজলিস্ট ছুড়ে ফেলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের যে ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তা দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক ও আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি হুমকি এবং সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। একপর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হয় যে, বিচারককে বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করতে হয়।

প্রকাশিত ভিডিও এবং প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার জিআর ১৫৬/২৫ মামলার জামিন শুনানির সময় বিচারক আইনানুগভাবে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ প্রদান করলে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা চরম মাত্রার ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অবমাননাকর ও সহিংস আচরণে লিপ্ত হন।

আইনজীবী খোরশেদ আলম একটি নথি দেখিয়ে উচ্চস্বরে আঙুল নেড়ে আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ঘটনার তারিখ, ঘটনার সময়, ঘটনার স্থান সেইম- দুইটা মামলা (বাদী আলাদা), এটা হয় নাকি?’

আইনজীবী আব্দুল খালেক মিলন বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘শোনেন স্যার, বলতে তো এখন খারাপ শোনা যায়, আমাদের কারণে আজ এই চেয়ারে বসা আপনি’। অপর আইনজীবী মো. জাবেদ জামিনের জন্য পুনরায় শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পুনরায় জামিনের একটা আবেদন করি। আপনি কালকে শুনানির জন্য রাখেন।’

বিচারক তাদের আইনানুগ প্রক্রিয়ায় স্পেশাল পুটআপ নিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার জন্য বললে আইনজীবীরা আরও ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ওই আইনজীবীরা বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল, ফ্যাসিবাদের দোসরসহ নানান অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন। তারা এজলাসে থাকা কজলিস্টও ছুড়ে ফেলে দেন। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অবৈধ বলপ্রয়োগের কারণে বিচারকার্য ব্যাহত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক এজলাস ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এ ঘটনার মাধ্যমে শুধু একজন বিচারককে অপমান করা হয়নি, বরং গোটা দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠেছে। বিচারকের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, যা কোনোভাবেই একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও আইনশাসিত দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। এজলাসে অরাজকতা সৃষ্টি, বিচারকের প্রতি হুমকি ও অপমান এবং বিচারকার্যে অবৈধ বলপ্রয়োগ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ধারা ২২৮ ও ৩৫৩ অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।

বিচারিক কর্তৃত্বকে পাশ কাটিয়ে, পেশি শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজ পক্ষে আদেশ আদায়ের অপচেষ্টা স্পষ্টভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও শৃঙ্খলার ওপর আঘাত। এটি একটি সংগঠিত, উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রয়াস, যা রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করার শামিল। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই ঘটনাকে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীন বিচার বিভাগের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন ঘটনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করার হীন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

এমন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়, বিচারকদের অবমাননার সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন আর কোনো আপস করবে না। ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এবং স্বচ্ছ বিচারিক পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে দেশের সব এজলাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।

এতে আরও বলা হয়, এই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন বার কাউন্সিলের কাছে অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দোষী আইনজীবীদের সনদ বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। আগামী ৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দেশের সব জেলা আদালতের বিচারকদের সঙ্গে নিয়ে যে কোনো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শরীয়তপুরে সড়কের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান

শিল্পীদের নিরাপত্তার দাবিতে অভিনয়শিল্পী সংঘের বিবৃতি

ঝুলে আছে চিলমারী উপজেলা বিএনপির কমিটি, তৃণমূলে স্থবিরতা

বাসের চাকায় পা হারানো সেই বাবা মারা গেছেন

৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ২২৭ জনের নিয়োগের গেজেট মঙ্গলবার 

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে চার পরিবর্তন

যশোর যুবলীগের সভাপতি রেন্টু ও তার স্ত্রী-সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারকে ‘লোক দেখানো’ বলছে এনসিপি

গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের দাবি 

যুদ্ধ শেষেই বেইজিংয়ে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের বিরুদ্ধে নতুন পরিকল্পনা?

১০

‘আসিফকে অপদস্ত কইরেন না’

১১

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হলো সেই অবৈধ ইটভাটা

১২

সাড়ে ১০ হাজার হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সরকারের

১৩

উপদেষ্টারা যা মন চায় তাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন : সালাহউদ্দিন

১৪

গাজায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি ‘অনাহারে’ : ডব্লিউএইচও প্রধান

১৫

নেতানিয়াহুর নতুন ঘোষণার পর গাজা নিয়ে সব আশা কি শেষ?

১৬

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

১৭

ভারতের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা : বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক

১৮

চীনা পর্যটন দিবস উদযাপন করল চীনা দূতাবাস ও আটাব

১৯

আনচেলত্তির ব্রাজিল অধ্যায় শুরুর আগেই চমক, দলে ফিরছেন নেইমার

২০
X