অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের প্রত্যেককে সাড়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দুজনকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাভোগের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু তাহের এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে গত ৭ আগস্ট এ মামলার রায়ের দিন ঠিক করা হয়। সেদিন দুদকের পক্ষে কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। তবে প্রস্তুতি না থাকায় যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য সময় আবেদন করেছিলেন পাপিয়া দম্পতির আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লাহ ভূঁইয়া। আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করেন। ফলে তিনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারেননি।
সোয়া ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ এ মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পরের বছরের মার্চ মাসে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদক কর্মকর্তা শাহীন আরা মমতাজ।
সেখানে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজেদের দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এরপর ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনসিয়াল স্যুট এবং চেয়ারম্যান স্যুটসহ ২৫টি কক্ষে অবস্থান করে খাবার, মদ, স্পা, লন্ড্রি, বারের খরচ বাবদ ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬১ টাকার বিল নগদে পরিশোধ করেন পাপিয়া।
ওয়েস্টিন হোটেলে থাকার সময় তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকার কেনাকাটা করেছেন, যার কোনো বৈধ উৎস তিনি তদন্তের সময় দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে ৩০ লাখ টাকা বাসা ভাড়া দিয়েছেন। গাড়ির ব্যবসায় ১ কোটি টাকা এবং নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ সলিউশনে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
বিভিন্ন ব্যাংকে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৮ টাকা জমা আছে উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে এসব অর্থের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র্যাব। অভিযানে তাদের বাসা থেকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং মফিজুর রহমান সুমনের নামে হোন্ডা সিভিএ ২০১২ মডেলের একটি গাড়ি জব্দ করা হয়, যার দাম ২২ লাখ টাকা।
সে সময় র্যাবের তরফ থেকে বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটি টাকার ওপরে। সব মিলিয়ে তাদের নামে ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে দুদকের মামলায় বলা হয়, এসব অর্থ তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আয় করেছেন।
গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র্যাব। বিমানবন্দর থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আর গুলশান থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে। পরে দুদক পাপিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। এরই মধ্যে অর্থ পাচারের ওই মামলায় গত ২৫ মে পাপিয়ার চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার, শেখ তায়িবা নূর ও জুবায়ের আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পান।
মন্তব্য করুন