কাগজের শপিং ব্যাগের মূল্য নেওয়া বন্ধ করতে আড়ং কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিশাত ফারজানা এ নোটিশ পাঠান।
লিগ্যাল নোটিশ অ্যাডভোকেট নিশাত ফারজানা বলেন, আমি আড়ংয়ের একজন নিয়মিত গ্রাহক। বিগত অনেক বছর ধরে আড়ং থেকে কেনাকাটা করে আসছি এবং প্রত্যেক কেনাকাটায় তাদের নিজস্ব লোগোসংবলিত কাগজের ব্যাগ পেতাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সম্প্রতি কেনাকাটার পর মগবাজার আউটলেটে বিল পেমেন্ট করতে গিয়ে জানতে পারি প্রোডাক্টের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কারণ হিসেবে জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর ২০২৫ সাল থেকে আড়ং শপিংয়ের সঙ্গে ব্যাগ দেওয়া হয় না। অর্থাৎ কেনাকাটা করলে পূর্বে কাগজের যে ব্যাগ ফ্রিতে পাওয়া যেত, সেই কাগজের ব্যাগগুলোই এখন টাকা দিয়ে কিনতে হবে এবং বিল পেমেন্ট বুথে ‘আপনার প্রিয় আড়ং ব্যাগ এখন আরও অর্থবহ’ এ রকমভাবে একটি লিফলেট দিয়ে গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে যে আড়ং শপিং ব্যাগের ওপর সীমিত চার্জ প্রযোজ্য এবং ব্যাগ বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থের পুরোটাই ব্যয় করা হবে স্থানীয় গাছ লাগানোর প্রকল্পে, সবুজ এবং টেকসই উন্নয়নসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার বিজ্ঞাপন সংবলিত। এ রকম হীন মানসিকতার বিজ্ঞাপন আড়ংয়ের মতো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়। সবুজায়নের এরূপ উদ্যোগকে বাংলাদেশের মানুষ সাধুবাদ জানায়, তবে সেটা আড়ং পণ্য বিক্রয়ের লাভ থেকে করলে আড়ং প্রশংসিত হবে এবং অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও এসব বিষয়ে সচেতন হবে। এ রকম নিম্নমানের কাগজের শপিং ব্যাগ গ্রাহকদের কাছ থেকে মূল্য নিয়ে তা দিয়ে পরিবেশ রক্ষার কথা বলা এক ধরনের চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক আদায় এবং অসাধু ব্যবসায়িক মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
নোটিশে আরও বলা হয়, আড়ং দেশের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর একটি। আড়ংয়ের দেওয়া ব্যাগ, যা বর্তমানে মূল্য বসিয়ে বিক্রি করছে, সেই কাগজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। ব্যাগগুলো রিসাইকেল পেপার, অর্থাৎ এই কাগজগুলো একবার ব্যবহৃত হওয়ার পর মেশিনের মাধ্যমে প্রসেসিং করা হয় এবং দ্বিতীয়বার ব্যবহার উপযোগী করা হয়। কিন্তু রিসাইকেল এই কাগজগুলো দিয়ে বানানো ব্যাগ, কেনাকাটার শেষে বাসায় আসার পরপরই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সুতরাং, এ মানের কাগজের ব্যাগগুলো টেকসই না হওয়ার কারণে মূল্য দিয়ে আড়ৎ থেকে কিনতে হবে, এ বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক এবং বিশাল গ্রাহক গ্রুপের জন্য এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, ব্যাগের মূল্যে সংযোজন করার পূর্বে আড়ংয়ের ব্যাগের আধুনিকতা এবং সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটলে ক্রেতা/ভোক্তা তা মূল্য দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। কিন্তু আড়ং ব্যাগে রয়েছে আড়ং ব্র্যান্ডের লোগো। অর্থাৎ একজন ক্রেতা টাকা দিয়ে ব্যাগ কিনবে, তা আবার আড়ংয়ের লোগো ব্যবহৃত হবে; সৃজনশীলতার কোনো ছাপ না রেখে ক্রেতাকে এরূপভাবে একপ্রকার বাধ্য করা এবং প্রতিষ্ঠানের এরূপ প্রচারণা অনৈতিক। সম্প্রতি আড়ংয়ে Reusable Fabric Bags নামে এক ধরনের শপিং ব্যাগের প্রচারণা শুরু করেছে, যা অতি চওড়া মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। ব্যাগগুলোর সাইজ এমন মাপের যাতে শুধু একটি পণ্য নেওয়া যাবে; অর্থাৎ কোনো গ্রাহক যদি একাধিক পণ্য ক্রয় করে, তার জন্য উচ্চমূল্য দিয়ে তাকে একাধিক ব্যাগ ক্রয় করতে হবে, যা আমাদের মতো সাধারণ আয়ের দেশের মানুষের জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এ ধরনের ব্যাগ সংস্করণের আগে আড়ং গ্রাহকদের মতামতের একটি জরিপ পরিচালনা করা উচিত ছিল। বর্তমানে আড়ংয়ের বিভিন্ন আউটলেটে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে এ বিষয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
নোটিশে তিনি আরও বলেন, আড়ং এই ব্র্যান্ড আমাদের সবার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। পরিবারের বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা থেকে শুরু করে, কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য আড়ং সবার কাছে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আড়ংয়ের কাগজের এই শপিং ব্যাগ টেকসই নয়, তাই কোনোরূপ সৃজনশীলতার ছাপ না রেখে এ ধরনের ব্যাগের জন্য মূল্য নেওয়া বন্ধ করে, ফ্রিতে দিতে হবে। আড়ংয়ের এরূপ কার্যক্রম কখনোই পরিবেশ সচেতনতার বিষয় পরিলক্ষিত হয় না, বরং এটি সরাসরি এক ধরনের অস্বচ্ছ ব্যবসা এবং গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা। এ ধরনের সস্তা মানসিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতা আড়ংয়ের মতো ব্র্যান্ডের কাছে থেকে অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনক।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, নোটিশ পাওয়ার ১০ (দশ) দিনের মধ্যে ব্যাগের বিপরীতে মূল্য নেওয়া বন্ধ না করলে বেআইনি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালত ও কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং অভিযোগ দায়ের করা হবে।
মন্তব্য করুন