ব্যবসায়ীকে অপহরণ, মারধর করে মুক্তিপণ দাবিসহ চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন জামিন পেয়েছেন। বাদীর উপস্থিতিতে তার জিম্মায় আসামিকে এ জামিন দেন আদালত।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন শাওনসহ একই মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি মো. হেলাল উদ্দিনকে (২৬) আদালতে হাজির করে গুলশান থানার পুলিশ। এ ছাড়া মামলায় আগেই গ্রেপ্তার হয়ে এক দিনের রিমান্ড শেষে আসামি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের তিনজনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই হারুনুর রশিদ।
এ সময় আসামির পক্ষে জয়নুল আবেদীন পলাশ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘মামলার বাদী আদালতে হাজির আছেন। বাদী আসামির পক্ষে হলফনামা দিতে চান। আসামি শাওন জামিন পেলে তার কোনো আপত্তি নেই।’
এ সময় আদালতে হলফনামা দাখিল করেন মামলার বাদী শেখ নাঈম আহমেদ। হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, মামলার তিন নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন শাওন জামিন পেলে কোনো আপত্তি নেই। এ ছাড়া হলফনামা ছাড়াও বাদী নাঈম শেখ আদালতকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আসামি শাওন উপস্থিত থাকলেও এ ঘটনায় তার কোনো তৎপর ছিল না। আসামি শাওন জামিন পেলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’
শুনানি শেষে আদালত আসামিকে বাদীর জিম্মায় ৫০০ টাকা বন্ডে জামিন দেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করা পর্যন্ত আসামি জামিনে থাকবেন। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোকতার হোসেন।
বাকি দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এদিকে মামলার এজাহারে বাদী শেখ নাঈম আহমেদ উল্লেখ করেন, রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় অবস্থিত ট্রিপজায়ান নামক একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক আমি। গত ৯ অক্টোবর দুপুর অনুমান ১টার দিকে ব্যবসায়িক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য গুলশান-১ আসি। পরবর্তীতে আমি আমার মিটিং শেষ করে গুলশান-১ গোলচত্বরের পশ্চিম পাশে ৫১ দক্ষিণ অ্যাভিনিউয়ের নিচ তলায় বিসমিল্লাহ হানিফ বিরিয়ানি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে খাওয়ার উদ্দেশ্যে যাই। আমি সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আসামি নাসির উদ্দিন শাওন তার মোবাইল আমাকে ফোন করে দুবাইয়ের বিমান টিকিট ক্রয় করবে মর্মে আমার অবস্থান জানতে চায়। আমি শাওনকে আমার অবস্থান জানালে ৫টা ৫৫ মিনিটে মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ হেলাল, নাসির উদ্দিন শাওনসহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন আমাকে ঘিরে ধরে জোরপূর্বক খলিফাস রেস্টুরেন্টে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
নাঈম আহমেদ উল্লেখ করেন, তারা আমার ফোন, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ নিয়ে নেয় এবং আমার কাছে নগদ ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমার মোবাইলটি নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ছবি তারা সংগ্রহ করে। তখন আমার ভাইয়ের ছেলে নাহিদুল ইসলাম খলিফাস রেস্টুরেন্টে এলে তারা আমার ল্যাপটপটি আমার ভাতিজা নাহিদুল ইসলামকে দিয়ে দেয়। আমি তাদের দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ধ্যা ৭টায় আমাকে গুলশান-১ লেকপাড়ে নিয়ে যায় এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ এলোপাতাড়ি মারধর করে। তাদের দাবি করা নগদ ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাত ১০টার মধ্যে দেওয়ার জন্য বলে, অন্যথায় তারা আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।
মামলার এজাহারে বাদী আরও বলেন, টাকা দিতে ব্যর্থ হলে রাত পৌনে ১২টার দিকে তারা আমাকে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে উঠিয়ে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার পার্শ্ববর্তী হয়ে হাতিরঝিল সংযোগ সড়কের দিকে নিয়ে যায়। এ সময় আমার চিৎকার শুনে যৌথবাহিনীর চেকপোস্টে আমাকে বহন করা মোটরসাইকেলটিকে থামালে শাওন আমাকেসহ ১নং আসামি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে রেখে অন্য আসামিদের নিয়ে পালিয়ে যায়। যৌথবাহিনী ইদ্রিসকে (১নং আসামি) ধরে তাদের হেফাজতে নেয় ও আমার মোবাইলটি উদ্ধার করে আমাকে ফেরত দেয়। যৌথবাহিনী তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে আমাকে ও ইদ্রিসকে গুলশান থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে।
এ ঘটনার পরদিন গুলশান থানা পুলিশ মোহাম্মদ ইদ্রিসকে আটক করে। ওইদিনই ইদ্রিস, হেলাল ও ছাত্রদল নেতা শাওনসহ আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শেখ নাঈম আহমেদ। পরে অভিযান চালিয়ে হেলাল ও শাওনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মন্তব্য করুন