পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের অপরাধ গোপন করে অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার জন্যে রাজসাক্ষী হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৃতীয় দিনের যুক্তিতর্কে তিনি এসব মন্তব্য করেন। এই মামলায় অপর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন।
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে আনা অভিযোগসহ বিভিন্ন সাক্ষীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, চৌধুরী মামুনের জবানবন্দি রেকর্ড করার পদ্ধতিটি সঠিক ছিল না।
তিনি বলেন, মামলার সাক্ষী মাহমুদ সাহেবের (আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান) বক্তৃতার ক্ষেত্রে আমার যুক্তি হচ্ছে উনি ভিন্ন মতাবলম্বী একজন ব্যক্তি। তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধাচরণ করা একজন ব্যক্তি। শেখ হাসিনার শাসন, সবকিছু তার ভালো লাগে না।
শেখ হাসিনার আইনজীবী বলেন, তিনি ‘যারে দেখতে নারী তার চলন বাঁকা’ এরকম একজন লোক। তিনি শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেন না; অতএব তার যা কিছু আছে তার চোখ বাঁকা, নাক বাঁকা, তার হাত বাঁকা সবকিছুই উনার কাছে এরকম মনে হয়েছে। সেটা থেকেই বিস্তারিত বক্তব্য দিয়েছেন। ইতিহাস টেনে এনেছেন, কবে কি করেছেন, বঙ্গবন্ধু কি করেছে, রক্ষীবাহিনী কি করেছে, এই যে ইতিহাসগুলো ইতোপূর্বে আমি এর প্রত্যেকটার জবাব দিয়েছি। ইতোপূর্বে যে যুক্তিতর্ক করেছি সেখানে উনার যে বক্তব্যগুলো এসেছে।
আমির হোসেন বলেন, মাহমুদুর রহমান ওই ঘটনার সময় এখানে ছিলেন না। বাংলাদেশে ছিলেন না। উনি ছিলেন বিদেশে। উনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে উনার জেল হয়েছে, জরিমানা হয়েছে। এই যে জেল জরিমানা হওয়া, এই যে তার ভেতরের ক্ষোভ, ক্ষোভ থেকে উনি যা না পারছেন তার থেকেও বেশি বলেছেন। সুতরাং ক্ষোভের বশবর্তী কেউ যদি কোনো কিছু বলে সেটাকে গ্রহণ মাননীয় আদালত করবেন কিনা, সেটা মাননীয় আদালতের বিবেচনা বলে আমি মনে করি।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে তৃতীয় দিনের মতো চলছে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন।
এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে। তবে, নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
মন্তব্য করুন