দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিম্নমানের চিনি দেশে নিয়ে আসত। সেগুলো এস আলম, ফ্রেশ, ইগলুসহ দেশীয় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মোড়কে বাজারজাত করত তারা। অবশেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জালে প্রেপ্তার হলেন এ চক্রের তিন সদস্য।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে রোববার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক টন চিনিসহ তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির মতিঝিল বিভাগের স্পেশাল অপারেশনস্ টিম।
গ্রেপ্তাররা হলেন, কুমিল্লার চকবাজারের আরিশা ট্রেডার্সের ম্যানেজার নিমাই বণিক (৪৪), ফেনীর সোনাগাজীর ইসমাইল ব্রাদার্সের মীর হোসেন (৩৮) ও চট্টগ্রামের চিনি বিক্রির দালাল আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (৩৯)।
ডিবিপ্রধান বলেন, সম্প্রতি দেশের একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ আসে। অভিযোগে তারা বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মোড়কে একটি চক্র ভারতীয় নিম্নমানের চিনি বাজার জাত করে আসছে। এতে মানুষ প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে মাঠে নামে ডিবির মতিঝিল বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার সাহেব বাজারের মমিন ব্রাদার্স সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ বস্তা চোরাচালান নিয়ে আসতেন। যার মাধ্যমে সরকারি শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে আসছিল চক্রটি। এসব চিনি কুমিল্লা সদর থানার বারাপাড়ার আরিশা ট্রেডার্সের মালিক খোরশেদের গুদামে মজুত করত। এরপর এস আলমসহ দেশীয় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের নকল মোড়কে প্যাকেট করে বিক্রি করত।
এরপর নিমাই বণিকের নির্দেশে আরিশা ট্রেডার্সের গুদামে অবৈধ চিনি ফেনীর ইসমাইল ব্রাদার্স, চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের জমজম ট্রেডার্স, চট্টগ্রামের আল মদিনা ট্রেডার্স, শহীদ ট্রেডার্সসহ ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কম দামে বিক্রি করা হতো।
হারুন বলেন, দেশের বাজারে চিনির ৫০ কেজির প্রতি বস্তার দাম ৬৭০০ টাকা। কিন্তু ভারতীয় চিনি প্রতি বস্তা ৬২০০ টাকা। প্রতি দিনই মমিন ট্রেডার্স আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ বস্তা চিনি কর ফাঁকি দিয়ে এনে বিক্রি করত। এর কারণ হিসেবে তারা আমাদের জানিয়েছে- দেশে চিনির দাম বেশি। অপর দিকে ভারতে চিনির দাম কম তাই ভারতীয় চোরাকারবারিরা লাভের আশায় বাংলাদেশের চোরাকারবারিদের কাছে চিনি বিক্রি করছে।
তারা বস্তা প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা কম দামে বিক্রি করত। এরপর দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামে বাজারে ছাড়া হতো। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ফলে বাংলাদেশের চিনি শিল্প ধ্বংসের দারপ্রান্তে।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, দেশীয় বাজারের চিনির মূল্যের ওপর ভারতীয় চোরাকারবারিরা চিনির মূল্য নির্ধারণ করে। দেশের বাজারে চিনির মূল্য যখন বস্তা প্রতি ৬৮০০ টাকা তখন ভারতীয় চিনি ৬৩০০ টাকা দরে বিক্রয় করে। যার কারণে দেশীয় চিনি শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এবং সরকার বিশাল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন