কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার জেরে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনার পর নতুন করে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান থেকে লাগাতার ড্রোন হামলা, মিসাইল নিক্ষেপ এবং ভারী গোলাবর্ষণ চলছে।
এই প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৯ মে) তুরস্কের সম্প্রচারমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এসব বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান আর্মির প্রধান মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনায় ভারত নিজেরাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, নিজেরাই বিচার করেছে এবং সে রায়ের ভিত্তিতেই পাকিস্তানের অন্তত ছয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। এটি কোনো ন্যায়বিচার নয়, বরং এটি একতরফা আগ্রাসন।
তিনি জানান, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত- এমন অভিযোগে ভারত পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানে হামলা চালায়। এতে নিরীহ শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ নিহত হয়েছেন। এই হামলার পর সীমান্তে পাকিস্তানের সেনারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী বলেন, আমাদের সেনারা কেবল আত্মরক্ষার্থেই সীমিত পাল্টা গুলিবর্ষণ করেছে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম এটিকে বড় ধরনের যুদ্ধোপযোগী আক্রমণ হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা সত্য নয়।
ড্রোন ও মিসাইল হামলার বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ তোলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ড্রোন ও মিসাইল ব্যবহারের ঘটনার প্রমাণ থাকা স্বাভাবিক। ভারত যদি সত্যি এমন কোনো হামলার শিকার হয়ে থাকে, তাহলে তারা সেই প্রমাণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থাপন করুক।
এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং পাইলটকে আটক করেছে। এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তার ভিডিও ফুটেজ, ছবি কিংবা আটক পাইলটের তথ্য প্রকাশ করা হোক। শুধু দাবি করে প্রচার চালালে তা বিশ্বাসযোগ্যতা পায় না।
পেহেলগামের পর্যটক হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনার পরপরই পাকিস্তান ভারতকে আন্তর্জাতিক একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। তবু ভারত তা অগ্রাহ্য করে নিজেরাই বিচারক, সাক্ষী এবং রায়দাতা হয়ে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও আইনের পরিপন্থি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী আরও বলেন, ভারতের কিছু রাজনৈতিক শক্তি অভ্যন্তরীণ সংকট ও চাপ মোকাবিলায় জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে পরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগমুহূর্তে কাশ্মীরে হামলার মতো ঘটনা ঘটানো এবং তার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।
তিনি বলেন, পেহেলগাম হামলার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে আসছে পাকিস্তান। কারণ এই হামলার পেছনে প্রকৃতপক্ষে কারা রয়েছে এবং কাশ্মীরকে ইস্যু করে কারা রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করছে, তা স্পষ্টভাবে বেরিয়ে আসবে।
মুখপাত্র আরও বলেন, যখন তদন্ত শেষও হয়নি, তখনই ভারত একতরফাভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ।
সাক্ষাৎকারের শেষদিকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে অর্থ ছাড় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের বিষয়। সেনাবাহিনী কেবল জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে।
মন্তব্য করুন