রমজান মাসজুড়ে রাজধানীর ৩০ স্থানে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চাহিদা বাড়ায় রমজানের শেষ সময়ে এসে দেখা যায়- একজন ক্রেতা ১ কেজির বেশি মাংস নিতে চাইলে কেজিপ্রতির জন্য বিক্রয় কর্মীকে ঘুষ দিতে হচ্ছে বাড়তি ৫০ টাকা।
এ নিয়ে দৈনিক কালবেলা অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেই বিক্রয় কর্মীকে।
অভিযুক্ত এ বিক্রয় কর্মীর নাম সাইফুর রহমান সিয়াম। তিনি আজিমপুর মাতৃসদন সংলগ্ন বিশতলা সরকারি কোয়ার্টারের সামনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
এর আগে শনিবার (৬ এপ্রিল) ‘সরকারি মাংস কিনতে দিতে হয় ঘুষ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে সকাল ৯টার মধ্যে পণ্য নিয়ে ফ্রিজারভ্যান পৌঁছার কথা থাকলেও সেটি আসে সকাল সাড়ে ১০টার পর। বিক্রি কার্যক্রম চলে বিক্রয় কর্মীদের মর্জিমতো। পর্যাপ্ত পণ্য থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দেওয়া হয় না ক্রেতাদের চাহিদমতো মাংস। একজন ক্রেতা যে কোনো ধরনের মাংস ১ কেজির বেশি নিতে চাইলে কেজিপ্রতি দিতে হবে ৫০ টাকা।
সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার (পরিচালক) দায়িত্বে থাকা মাহফুজ কালবেলাকে বলেন,
কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর আমাদের বিষয়টি নজরে আসে। আজিমপুর ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে এদিন যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরসহ ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে সংবাদের সত্যতা পাই। সিয়াম বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করছিলেন। যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক ছিল। কয়েক বছর ধরে এ কার্যক্রম আমরা করছি, এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। আমরা সিয়ামকে ডেকে অফিসিয়াল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সে মুহূর্তেই বরখাস্ত করি।
বিক্রয় কেন্দ্র ক্রমান্বয়ে মাংসের পরিমাণ কমবে কিনা জানতে চালে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে মাংস কম আসবে এটা মোটেই সত্যি নয়। প্রতিবেদনে আমাদের প্রতিনিধি বলেছিলেন ৬০ কেজি মাংস রয়েছে। মূলত মাংস ছিল ৮০ কেজি। শেষ দিন পর্যন্ত একই পরিমাণ মাংস সরবরাহ করা হবে। আমাদের ধারণা, সিয়াম মানুষের মধ্যে একটা প্যানিক সৃষ্টি করতেন, যার মাধ্যমে সে সুবিধাটা নিতেন।
এর আগে পণ্য বিক্রিতে বাড়তি টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান কালবেলাকে বলেন, বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কোনো সুযোগও নেই। এ রকম হওয়ার কোনো কথা না।
তিনি বলেন,
মন্ত্রণালয় থেকে গরুর মাংস নিলে মুরগির মাংস নেওয়া যাবে না এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাড়তি টাকা নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
রমজান মাসে রাজধানীর ৩০টি স্থানে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আর মাছ বিক্রি চলে ১৫ রমজান পর্যন্ত। ১ম রমজান থেকে শুরু হওয়া দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত।
গেল ১০ মার্চ রোববার সুলভ মূল্যে রাজধানীর খামারবাড়িতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান।
এ কর্মসূচির আওতায় তরল দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা, ডিম প্রতিটি ৯ দশমিক ১৭ টাকা (১ ডজন ১১০ টাকা), গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকা এবং চামড়া ছাড়ানো ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন