মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে জাল জালিয়াতির মামলা করেছে। লাশ দাফনের জন্য জালিয়াতি করে কাগজ তৈরির অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে ডিবি পুলিশ। এসময়ে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আমরা তাকে রিমান্ডে এনে অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করব। সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। মিল্টনকে রিমান্ড দেওয়ার সময় তার স্ত্রীকেও মুখোমুখি করা হবে। যদিও এ ঘটনায় তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুন্সি সাব্বির আহমেদ বলেন,
মিলটন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুইটি মামলার রুজু হয়েছে। জাল মৃত্যু সনদ তৈরির করার অভিযোগে একটি মামলার রুজু হয়েছে। অন্যদিকে তার আশ্রমের টর্চারসেলে মানুষজনকে মারধর করার অভিযোগে আরও একটি মামলা রুজু হয়েছে। এছাড়া মানবপাচার করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর আগে আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে মিল্টনের বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ।
সংবাদ সম্মেলনে মানবপাচার, কিডনি কেটে বিক্রি, মরদেহ দাফন গড়মিল, মৃত্যু সনদে জালিয়াতির মতো ভয়াবহ অভিযোগের বিষয় তুলে ধরেন ডিবিপ্রধান। তিনি বলেন, মৃত্যুর জাল সনদ তৈরিসহ তার বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগ রয়েছে। সব বিষয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ডিবিপ্রধান বলেন, মিল্টন সমাদ্দার তার বাবাকে পেটালে এলাকাবাসী তাকে এলাকাছাড়া করে। সেখান থেকেই মূলত তার উত্থান হয়। পরে শাহবাগে এসে একটা ফার্মেসিতে চাকরি করে। সেখান থেকে ওষুধ চুরি করার কারণে বের করে দেয়। পরে মিটু হালদার নামে এক নার্সকে সে বিয়ে করে। বিয়ে করার পর তার স্বপ্ন এলো সে একটা ওল্ড অ্যান্ড কেয়ার স্থাপন করবে। তারপর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ এবং ‘জীবনের ধাপে ধাপে প্রতারণা’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর মাঠে নামেন ডজন ডজন সাংবাদিক। উঠে আসে তার একের পর এক ভয়ংকর প্রতারণার আর অপকর্মের তথ্য।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কোটি ষাট লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের। অভিযোগ রয়েছে এই বিশাল অনুসারীদের কাজে লাগিয়ে তার মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন মানবিক কাজ প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা।
মন্তব্য করুন