তানজিম মাহমুদ,জবি
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুলিশ এত নির্যাতন করতে পারে  আমার কল্পনায় ছিল না

পুলিশ এত নির্যাতন করতে পারে  আমার কল্পনায় ছিল না

“আমাকে চিত করিয়ে শুইয়ে বলে তোর এক হাত তো ছাত্রলীগ ভেঙেছে আরেক হাত আমরা ভেঙে দিব। আমাকে নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত মারধর করে। রুটি যেভাবে বেলে ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়। আমি কান্না করলেই বলতো তোকে মেরেই ফেলব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে এভাবে মারত৷”

শুক্রবার (৯ আগস্ট) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিভৎস মারধরের বর্ণনায় এসব কথা বলেন জবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নূর নবী। তাকে গত ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে আটক করে ডিবি।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের নির্যাতনের শিকার নূর নবী বলেন, আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এডিসি বদরুল আমাকে ডেকে আলাদা করে। ডিবির পাঁচটা গাড়ি এসেছিল। তারা শুধু আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে উঠিয়েই আমাকে মারধর শুরু করে। বিশেষ করে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার গোলাম মোস্তফা এবং তার সঙ্গের সহযোগীরা।

নূর নবী বলেন, যখন আমাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয় তখন আমি ভেবেছিলাম গাড়িতে যে টর্চার করা হয়েছে এর চেয়ে বেশি টর্চার আর হতে পারে না। আমাকে হয়তো এখন তারা ছেড়ে দিবে, না হয় গ্রেপ্তার দেখাবে। কিন্ত এর চেয়েও ভয়াবহ পাশবিক নির্যাতন যে তারা করতে পারে, তা আমার কল্পনায়ও ছিল না। আমাকে যখন ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় তখন কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। শুরুতে এক চেয়ারে বসিয়ে আমার শরীরের সব কাপড় চোপড় খুলে ফেলে৷

নূর নবী আরও বলেন, পুলিশ আমাকে মারছিল আর বারবার বলছিল- তোর তথ্য আমরা অনেক দিন থেকে শুনেছি, ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন তোর কথা আগেই বলেছে। তুই জঙ্গি, তুই শিবির। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে বলেছে- তুই ছাত্রদল করিস। তারা যেভাবে আমাকে মেরেছিল আমি ভেবেছিলাম আমার পায়ের অংশ পচে যাবে বা কেটে ফেলতে হবে।

কারেন্ট শকের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে প্রসাব করতে বলে। প্রসাব করার সময় আমাকে বৈদ্যুতিক শক দেয়। হাতে একটা ইনজেকশন দেয়। ওরা আমার অন্ডকোষে জোরে জোরে আঘাত করে। বারবার আমার মনে হচ্ছিল আমি মরে যাব।

তিনি বলেন, পুলিশ গত ১৫ জুলাই থেকে আমার ফোন ট্র্যাক করছিল। অনেকের বাসায় ছাত্রলীগ কর্মীরা বন্দুক তাক করে। আমি আমার মায়ের থেকে ১৭ তারিখ বিদায় নিয়েছিলাম এই বলে যে, “আমি মরে গেলে কেঁদো না। আর বেঁচে থাকলে বিকালে ফোন দেব।” এই ভয়েস রেকর্ডটা তারা শুনিয়ে শুনিয়ে মেরেছে। এক পর্যায়ে ওরা আমার হাত-পা দুই দিক করে পাড়া দিয়ে ধরে। তারা আমার থেকে বিএনসিসির কার্ড পায়। তখন বলে, “আমি এত শক্ত কেন? এ জঙ্গি, সে জঙ্গি ট্রেনিং নিয়েছে৷ আমি এটা বলতে পারিনি যে আমি সেনা মহড়ায় অংশ নিয়েছি, আমি অন্তত জঙ্গি হতে পারি না। আমাকে উলঙ্গ অবস্থায় রেখে দেয়। একটা সময়ে বিকেলে ডিবি হারুন এসে বলে, একে বাঁচিয়ে রাখছো কেন? একে ক্রসফায়ারে দে। আমার দুই হাঁটুতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলে। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আমাকে মেরেই ফেলবে।

কারাগারে আমি অনেক গার্ডকে কান্না করে বলেছি, আমাকে হাসপাতালে নেন। আমাকে হাসপাতালে নেয়নি। কারাগারে পানিতে মরিচ দিয়ে রাখা হতো যেন পানি খেতে না পারি, গোসল করতে না পারি৷

নূর নবী বলেন, পুলিশ আমাকে বলে তোকে ক্রসফায়ারে দিব। তুই রেডি হয়ে নে। আমরা মোট ছয়জন ছিলাম। রমনায় নিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়ে আমার হাতে পেট্রোল বোমা ধরিয়ে দিল। ভিডিও করা শুরু করল। তারা যে এভাবে মামলা সাজাবে আমি ভাবতেও পারিনি। দেশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এরকম পর্যায়ে যাবে ভাবিনি। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ দেশের মানুষের আস্থার জায়গা হওয়া উচিত ছিল। যাই হোক তারা আমাকে মারেনি। আমি বেঁচে ফিরেছি। স্বাধীন দেশে আবার ফিরতে পেরেছি। এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সোহান, স্বর্ণা আক্তার রিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল, এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাইমা আক্তার রিতা, বিএম তানজীল, শাহিন আলম শান, স্বপনসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছে পাকিস্তান, সূচি ঘোষণা

ঢাকায় স্থগিত পাকিস্তানি ব্যান্ডের কনসার্ট

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সারা দেশে বিশেষ দোয়া

বিপিএল ২০২৬: কোন দলের অধিনায়ক কে, যা জানা গেল

বেলজিয়াম / যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য ফাঁস

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে ভারতের অগ্রগতির কথা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মানবিক সংকটে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকাই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গাজীপুর মহানগর পুলিশে বড় রদবদল

নারী ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজক জার্মানি

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১০

বিলাসবহুল বাংলোতে রণবীর-আলিয়ার সুখের সংসার

১১

খুবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৮ ডিসেম্বর, আসনপ্রতি লড়বেন ৯৭ জন

১২

বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে অটোরিকশার ৪ যাত্রী নিহত

১৩

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কী, খরচ কেমন হতে পারে?

১৪

ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র : জেনে নিন কোন পটে কারা

১৫

শাজাহান খানের মেয়ে ঐশীর নামে দুদকের মামলা

১৬

জাবিতে চার আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন

১৭

বিশ্বকাপের ড্র আজ : কখন, কোথায় হবে জেনে নিন

১৮

আরও ক্ষমতা বাড়ল পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের

১৯

গরম ডাল-ভাতের সঙ্গে লেবু চিপে খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?

২০
X