বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত। এই জেলাগুলোয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এছাড়া এ মুহূর্তে আট লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ মানুষ। দেশের এই সংকটকালে দিন-রাত পরিশ্রম করে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বন্যাকবলিত অঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) চলছে তাদের গণত্রাণ সংগ্রহের দ্বিতীয় দিন।
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর সর্বস্তরের জনগণ সামর্থ্য অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ তহবিলে নগদ অর্থ ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করছেন। এর মধ্যে চাল, ডাল, আলু, তেল, খাবার স্যালাইন, লবণ, বিশুদ্ধ পানি, চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটসহ নানা জাতীয় শুকনো খাবার থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড়, লাইফ জ্যাকেট, শিশুখাদ্য ও স্যানিটারি প্যাডসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই রয়েছে। এসব ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। একটি টিম ত্রাণ সংগ্রহ করে জমা করছে এবং একটি টিম টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় প্যাকেজিং ও পাহারার দায়িত্বে রয়েছে। অন্য দুই টিম টিএসসির মূল ফটকের সামনে বুথ বসিয়ে নগদ অর্থ সংগ্রহ করছে। এ সময় তারা অর্থ প্রদানকারীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখছেন।
জানা গেছে, এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় গণত্রাণ সংগ্রহের কাজ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সংগ্রহ করা ত্রাণ সামগ্রী রাতভর প্যাকেজিং করে আজ ভোর রাতে কয়েকটি ট্রাক নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকার উদ্দেশ্যে চলে যান একদল স্বেচ্ছাসেবক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামের দেওয়া তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবারের ত্রাণ সংগ্রহে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা।
রাজধানীর উত্তরা থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা একজন বলেন, আমি বন্যার্তদের দুর্দশা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। কিন্তু বিশ্বস্ত কোনো মাধ্যমে তাদের সাহায্য না পাঠাতে পেরে এতদূর থেকে এখানে ছুটে এসেছি। এই সন্তানরা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। তাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, গতকাল টিএসসির বুথ ও অনলাইন মাধ্যমে সর্বমোট ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ শুকনো খাবার, কাপড়চোপড় এসেছে, যেগুলো এরই মধ্যে প্রস্তুত করে বন্যা দুর্গত এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কার্যক্রম আজ রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক বিভাগ, ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বন্যার্তদের সহযোগিতায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্নভাবে ফান্ড রাইজিং এবং টিম পাঠিয়ে অথবা প্রতিনিধি পাঠিয়ে বন্যার্তদের সহযোগিতা করছেন।
মন্তব্য করুন