বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সব দপ্তরে তালা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা মেরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। একদফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে একাডেমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবে দপ্তর শাটডাউনের ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
একদফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আজ সকাল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যবিরোধী নানা স্লোগান দেন তারা। পরে দুপুর ১টার দিকে আরেকটি মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতীকী কফিন নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আধাঘণ্টা অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এর আগে উপাচার্য ও ট্রেজারের কার্যালয় এবং প্রশাসনিক দপ্তরে তালা মেরে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন দমাতে বিভিন্ন হুমকি ও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে যেটা কখনোই কাম্য নয়। এর আগে যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গেলে ১৪ ফেব্রুয়ারি নাম ও অজ্ঞাতসহ ৪২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা এখন উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা আন্দোলন করছি।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী এসএম ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর সম্মতিতে আমরা প্রশাসনিক শাটডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে পাঁচটি বিভাগ উপাচার্যের পদত্যাগের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। আমরা আশা করি অন্য বিভাগগুলোও বিবৃতি দেবে।
তিনি আরও বলেন, উপাচার্য শূচিতা শরমিন পদত্যাগ না করলে একাডেমিক শাটডাউনের দিকে হাঁটতে বাধ্য হবো। ইতোমধ্যে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাড়া পেয়েছি। আগামীকাল আমরা আলোচনার মাধ্যমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউনের ঘোষণা দিতে পারি। প্রয়োজনে আমরা আমরণ অনশনেও যেতে বাধ্য হবো।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক আহমেদ বলেন, উপাচার্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও অধিকার হারিয়েছেন। তিনি দ্রুত পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলে যাবেন; তা না করলে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আজমাইন সাকিব বলেন, আপনারা জানেন ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যারা ফ্যাসিস্ট আমলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে তারাই পুনরায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত আপনারা দেখেছেন আওয়ামী সরকার যৌক্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে হামলা মামলা দিয়ে দমিয়ে রাখত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শূচিতা শরমিন একই কায়দায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন হামলা-মামলা দিয়ে দমিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নব্য ফ্যাসিবাদ কায়েম করার চেষ্টা করছে। আমরা সেটা হতে দিতে পারি না। অনতিবিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।
গত ৩০ নভেম্বরও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন থেকে সাময়িক বিরত হন একদল শিক্ষার্থী। এ ছাড়া উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশ করে গেট ভাঙচুরের অভিযোগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ৪২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় মামলা করা হয়েছে।
মামলায় প্রধান সাক্ষী হিসেবে উপাচার্য ড. শূচিতা শরমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ হিসেবে উল্লেখ করে সিন্ডিকেট একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে ১৩ এপ্রিল অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মন্তব্য করুন