বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় কয়েকটি মামলার আসামি প্রক্টর অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (০৭ মে) রাত ২টার দিকে নগরীর গণেশপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নগরীর তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম সরদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুল ইসলামকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (০৬ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার বাদী হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হারুন অর রশিদ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসামি হিসেবে দুই শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ৮০-১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৪৩ নম্বর আসামি হিসেবে রাফিউল হাসানের নাম আছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়ার সহকারী রেজিস্টার রাফিউল হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় কয়েকটি মামলা আছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। বুধবার (গতকাল) রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসানসহ ছাত্রলীগের ৩৬ জনকে ১ থেকে ৩৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। যুবলীগের রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকীসহ বহিরাগত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ১৩ জন আসামি হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল এবং গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তারা আত্মগোপনে আছেন।
এ ছাড়া আসামির তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
তাছাড়া রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহানুর আলম পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান, তাজহাট থানার তৎকালীন ওসি রবিউল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও আমির আলীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সুজন চন্দ্র রায় ও আমির আলী কারাগারে আছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করেন। ১১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ১৬ জুলাই পুলিশ ও বহিরাগত অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জন আসামি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, লাঠিসোঁটা, রড, ছুরি, রামদা, কিরিচসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করেন। পুলিশও নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে।
নগরীর তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম সরদার কালবেলাকে বলেন, কোটা আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৮ মে) তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন