ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বেশ কিছু প্রগতিশীল ও বাম আদর্শের ব্যক্তিদের বিরোধিতায় উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি উদ্যানের অপরাধ বন্ধে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও আশানুরূপ কোনো ফিডব্যাক পায়নি ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৩ মে) মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও ঢাবির স্যার এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহতের ঘটনায় এ ইস্যুটি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। এ ঘটনাকে ‘ক্যাম্পাসের ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছে ছাত্রদল। আজ দুপুরে বিক্ষোভের ডাকও দিয়েছে সংগঠনটি।
জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন। এর আগে, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটটিতে ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রেদওয়ানুল ইসলাম রানার উদ্যোগে একদল শিক্ষার্থী তালা ঝুলিয়ে দেয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি প্রবেশমুখে ব্যারিয়ার স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে আসছিল বামপন্থিরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের রাস্তা আটকানোর আপনারা কেউ না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের পড়ালেখার অধিকার নিশ্চিত হয়, সে জনগণের রাস্তা আটকানোর কেউ না আপনারা।
তিনি আরেক ফেসবুক পোস্টে বলেন, কাদের সাথে কথা বলে রাস্তা অবরুদ্ধ করছেন আপনারা? অংশীজনের মতামত আগ্রাহ্য করছেন কোন সাহসে? প্রক্টরকে এত ক্ষমতা দিল কে?
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সাদিক বলেন, বিষয়টিকে আমরা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আসলে একটি জনপরিসর। এখানে নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু নিয়ে, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে যখন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম হয়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে তাতে অংশগ্রহণ করে। সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজির স্বার্থে যে বিপুল পরিমাণ দোকান স্থাপন করা হয়েছিল এবং সেসব দোকানকে কেন্দ্র করে বিপুল মানুষের সমাগম হতো, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করেছে। তাই টিএসসি থেকে এ দোকানগুলো উচ্ছেদ করা জরুরি শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করার জন্যই। যাতে ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি খাবার দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে না হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই জনপদের মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাই সেখানে জনপরিসর কমানোর সিদ্ধান্ত ঢাবিকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটি দীর্ঘমেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ক্ষতি করবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই। এদিকে সাম্য হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান ও প্রক্টরের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রদল।
যদিও এই দাবিকে ‘লাশের রাজনীতি’ বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী মাহবুব তালুকদার বলেন, লাশের রাজনীতি হচ্ছে। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই যেন তিনি এর মধ্য থেকে আমাদের মুক্তি দেন।
তিনি বলেন, উদ্যানের গেট বন্ধ করেছি তিন-চার বার। প্রতিবার বামেরা খুলেছে এবং আমার আর রিদুয়ান রানার (একই হলের শিক্ষার্থী) নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিউজও হয়েছে।
ঢাবি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাইফুল বলেন, যারা বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেছে এই দায় তাদেরও। নূর নবী নামক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রক্টর তো কম চেষ্টা করেননি। বামদের জন্য কোনো কাজ করা যায় না- এটা সবাই জানে। এদের গুটিকয়েকের কাছে মেজরিটি হেরে যায়।
মন্তব্য করুন