মৌলভীবাজারের শমশেরনগর রোডের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী শাহ্ ফয়জুর রহমান রুবেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত জুহেল মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ অন্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার শহরের শমশেরনগর রোডে এফ রহমান ট্রেডিং নামের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে ব্যবসায়ী শাহ ফয়জুর রহমান রুবেল একা ছিলেন। এ সময় ছিনতাইকারী জুহেল মিয়া ক্রেতা সেজে দোকানে প্রবেশ করে। রুবেল নামাজ পড়া শেষ করলে আসামি জুহেল রং দেখতে চায়।
রং দেখাতে গোডাউনে নিয়ে গেলে পকেটে থাকা ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে জুহেল। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জুহেলের হাতের আঙুল কেটে যায়। তারপরও রুবেলকে ১৫টি কোপ দেয়। পরে দোকানের ক্যাশ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা নিয়ে অটোরিকশা ভাড়া করে হাসপাতালে যায় আসামি। তখন রিকশাচালককে রক্তমাখা ২০ টাকার নোট দেয় সে।
তিনি আরও বলেন, আহত ব্যবসায়ী রুবেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার দিন রাতেই মারা যান। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা হয়। পুলিশি তদন্তে আসামিকে বহন করা অটোরিকশাচালককে শনাক্ত করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসার সময় খুনি একটি অটোরিকশায় উঠে।
অটোচালক পুলিশকে জানায়, তার যাত্রীর হাতে প্রচুর রক্ত ঝরছিল। সে ভাড়া দিতে একটি রক্তমাখা নোট দেয়। এ তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে হত্যাকারীকে শনাক্ত করে। তার হাতেও ব্যান্ডেজ ছিল, যা খুনের সময় আহত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। শনাক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ অভিযান চালিয়ে ১৭ আগস্ট দুপুরে শ্রীমঙ্গলের লইয়ারকুল গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে জুহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আর্থিক সংকটে হতাশ হয়ে জুহেল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যার দিন সে পুরো শহরে ঘুরে অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি দোকান খুঁজছিল। অবশেষে রুবেলের দোকানেই সুযোগ পেয়ে সে হামলা চালায়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুহেল হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
নিহত রুবেল মৌলভীবাজার শহরের সুপরিচিত ব্যবসায়ী ছিলেন। হত্যার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন। জানাজায় অংশ নেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তারা এ হত্যার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি করেন।
ব্যবসায়ী মহলের দাবি, শহরে দিনে-দুপুরে ব্যবসায়ী খুন হওয়া নিরাপত্তাহীনতার বড় প্রমাণ। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মন্তব্য করুন