রাস্তার মাঝে কেউ শুয়ে আছেন। কেউ বসে। কেউ আবার গান গাইছেন। হাতে তালি দিয়ে কেউ অন্যকে উজ্জীবিত রাখছেন। কেউ আবার মেতেছেন খোশগল্পে। কেউ দিচ্ছে স্লোগান কেউ পড়ছে কবিতা। এভাবেই কাকরাইল মসজিদের সামনে ৩ দফা দাবিতে রাত কাটান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৪ মে) রাত কাকরাইল মোড়ে মসজিদের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এভাবেই কর্মসূচিতে পালন করতে দেখা যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র অধিকার ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধীসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী অবস্থান করছে।
সবাই যার যার জায়গা থেকে অপরকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মার যখন খেয়েছি মাইর আরও খাব অধিকার আদায় না করে ক্যাম্পাসে ফিরব না।
জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সব ক্রিয়াশীল সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রদল আছে। কাকরাইল মসজিদের ভেতর প্রায় ৫ শতাধিক আর বাইরে রাস্তায় অসংখ্য ছেলে অবস্থান করছে। তারা বিপ্লবের গান করে সময় পার করছে। রাস্তায় যখন নেমেছি রাস্তা থেকেই সব দাবির ফয়সালা হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি ন্যায্য দাবি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আমরা সব সময় আপসহীন। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে এসেছিলাম যমুনা। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপরে বর্বরতার সহিত আমাদের ভাইবোনের আঘাত করেছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি। আমরা দাবি আদায় রাজপথে আছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রাকিব বলেন, যেহেতু রাজপথে আমরা নেমেছি অধিকার আদায় না করে আমরা ফিরব না মার যখন খেয়েছি মাইর আরও খাব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার আদায়ের আমরা আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাস ছেড়ে এসেছি আমাদের দাবি পূরণ না করে আর ক্যাম্পাসে ফিরতে চায় না তাতে যদি আমাদের আরো এক সপ্তাহ এখানে থাকা লাগে আমরা তাই থাকব ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাতে রাস্তায় রাত কাটান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। রাত ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মোর্শেদ ভুইয়া। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারারাত তারা রাস্তায় সময় পার করেন। এ ছাড়া রাত ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড.মোশাররফ বলেন, আমার শিক্ষার্থীরা আছে; এ জন্য আমি আছি। আমার ছেলেদের রেখে আমি যেতে পারি না। আমাদের দাবি যৌক্তিক।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো-
আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।
এদিন সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লংমার্চে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষার্থী। লংমার্চটি গুলিস্তান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসলে ১২টা ৪০ মিনিটে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে লংমার্চে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর। এ সময় ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
পরে রাতে উপদেষ্টা মাহফুজ সামনে বিফ্রিং করতে আসেন। মাহফুজের বিফ্রিংয়ে অসন্তুষ্ট হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজকে উদ্দেশ করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বক্তৃতার একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বোতল ছুড়ে মারেন একজন। উপদেষ্টা বিফ্রিং বন্ধ করে রাগ করে চলে যান।
এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীরা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় এবং কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন।
মন্তব্য করুন