যদি জানতাম আমার ছেলের আয়ুষ্কাল এত কম, তাহলে আমি নিজেকে তৈরি করার জন্য সময় দিতাম না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ রাজিবুল করিমের মা জান্নাতুল ফেরদৌস।
বুধবার (০৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান : অতীতের চেতনা, ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ স্কাউট পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ স্কাউটস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জান্নাতুল ফেরদৌস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যদি জানতাম আমার ছেলের আয়ুষ্কাল এত কম, তাহলে আমি নিজেকে তৈরি করার জন্য সময় দিতাম না। আমার ছেলে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেত না, কিন্তু মানুষের সেবায় এগিয়ে যেত। সে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিল। ক্লাস ফাইভ ও এইটে বৃত্তি পেয়েছিল, দশম শ্রেণিতে এ প্লাস পেয়েছিল। এসএইচসিতে সাতটি পরীক্ষায় ৯০-এর বেশি নম্বর পেয়েছিল। আমার মেধাবী ছেলেকে মনে পড়লে কান্না আসে।
শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার সংস্কার আর নির্বাচন করুক, তাতে কিছু বলার নেই। আমরা চাই বিচার। বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। রক্তের বিনিময়ে দেশে পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু শহীদ পরিবারের জন্য কোনো ফান্ড নেই। কোনো অনুষ্ঠান বা দোয়ার আয়োজনের জন্য গেলে অনেকেই বলেন সময় নেই। এতে কষ্ট লাগে।
শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর মাহফুজুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, যাদের পরিবারের কেউ শহীদ হয়েছেন, তারাই এই ব্যথা বুঝতে পারেন। জুলাই-আগস্টে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আসামিদের জামিন দেওয়া হচ্ছে, আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলো দেখে কষ্ট হয়। শহীদ পরিবারের ওপর লাঠিচার্জ করা হলে আরও কষ্ট হয়। আমরা শহীদদের বিচার দেখতে চাই।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, আমরা যেভাবে গুছিয়ে সবকিছু করতে চাই, সেভাবে করা যাচ্ছে না। এখনো বড় ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, শহীদরা অনেক গুণী ছিলেন। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাদের গড়ে তুলেছিলেন। স্কাউটরা গুলি চলার মাঝেও মানুষের সেবা দিয়েছে। দেশের যে কোনো বিপদে তারা এগিয়ে এসেছে। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মাইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহেনা পারভীনসহ অনেকে।
মন্তব্য করুন