ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে।
ঢাবির ৩৮তম কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকেই সীমিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে যাতায়াত। এদিন রাত ৮টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত ৩৪ ঘণ্টা বিধিনিষেধ থাকবে এসব প্রবেশপথে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীরা ছাড়া কেউ থাকতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে থাকা শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা থাকতে পারবেন। তবে ক্যাম্পাসে ঢোকা-বের হওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরও বিশেষ পাস লাগবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ৩৪ ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নিজ নিজ বৈধ আইডি কার্ড সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে টিএসসির সব সংগঠনের কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। যানবাহনের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুল্যান্স, ডাক্তার, রোগী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন) প্রবেশ করতে পারবে। বাকি কোনো যানবাহন ঢুকতে পারবে না।
ভোটের দিনে আচরণবিধির নিয়মগুলো
১. ডাকসুর আচরণবিধির ৩(খ) অনুযায়ী, ভোটের দিনে কোনো ধরনের যানবাহন (মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি ইত্যাদি) ব্যবহার করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা-নেওয়া যাবে না।
২. শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই দিন শুধু চিফ রিটার্নিং অফিসার বা রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদিত যানবাহন নির্বাচনী এলাকায় চলাচল করতে পারবে। তবে প্রার্থী, ভোটার ও শিক্ষার্থীরা চাইলে বাইসাইকেল বা রিকশায় ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবেন।
৩. কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থক অন্য প্রার্থী কিংবা ভোটারকে ভয়ভীতি, বলপ্রয়োগ বা বাধার মাধ্যমে ভোটাধিকার থেকে বিরত রাখতে পারবেন না।
৪. ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখতে হবে। বুথের ভেতরে এসব ডিভাইস ব্যবহার বা ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৫. ভোট প্রদান শেষে ভোটারকে অবিলম্বে কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে। ভোট দেওয়ার লাইনের বাইরে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভিড় বা জটলা তৈরি করা যাবে না এবং অকারণে দীর্ঘসময় অবস্থান করা যাবে না।
৬. নির্বাচনের দিনে ভোটার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ থাকবে।
৭. কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে ভোটার স্লিপ বিতরণ করা যাবে না। তবে ভোটকেন্দ্র থেকে অন্তত ১০০ মিটার দূরে স্লিপ দেওয়া যেতে পারে।
এসব বিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার বা রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্যান্য দণ্ড।
এ ছাড়াও নিরাপত্তায় দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিএমপির দেয়া হিসাব অনুযায়ী, আজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য ১৭৭১ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আগামীকাল সেটা আরও বাড়বে। ডাকসুর দিন ঢাবির নিরাপত্তার জন্য ২০৯৬ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। রেগুলার ফোর্স ছাড়াও পুলিশের বিশেষায়িত টিম, সোয়াত ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এখানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। এছাড়া, সাদা পোশাকে ডিবি সদস্যরা টহলে রয়েছেন। সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ টহল ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানান তিনি। অনাবাসিক সবার জন্য চালু থাকবে বাস
ভোটের দিন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য সব বাসরুটের সার্ভিস চালু থাকবে। ভোটের কথা বিবেচনা করে নিয়মিত বাসরুটের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বাসরুট তৈরি করা হয়েছে এবং বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকবে শাটল সার্ভিস। ভোটারদের সুবিধার্থে ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত শাটল সার্ভিস চলবে। প্রকাশিত রুটম্যাপ অনুযায়ী, শাটল সার্ভিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে কার্জন হল হয়ে শাহবাগ, টিএসসি, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ক্লাব, ইউল্যাব স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিনেট ভবন এবং শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র হয়ে আবার ভূতত্ত্ব বিভাগে চক্রাকারে চলমান থাকবে।
মেট্রোরেলের এক স্টেশন বন্ধ
এদিকে ডিএমটিসিএল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে টিএসসির মেট্রোরেল স্টেশনও বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার বিকাল ৪টা থেকে মঙ্গলবার সারা দিন বন্ধ থাকবে ঢাবি স্টেশন। প্রার্থী ও পদসংখ্যা
তফসিল অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। ক্যাম্পাসের ৮টি কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনে একজন ভোটারকে মোট ৪১টি ভোট দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি, হল সংসদে ১৩টি পদে।
ডাকসুতে মোট ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন ভোটারের মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫ জন। নির্বাচনে ২৮ পদের বিপরীতে লড়ছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৪০৯ জন ও নারী প্রার্থী ৬২ জন।
এই নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ১৯ জন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ১৭ জন।
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ৯ জন।
ক্রীড়া সম্পাদক ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক ১১ জন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক ১৫ জন। এছাড়া ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ২১৭ জন।
মন্তব্য করুন