জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে একযোগে ২১টি হলে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এ নিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামান সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এ নির্বাচনকে ঘিরে ঝুঁকির কোনো আশঙ্কা নেই। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে দুই হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ৭ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে। বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাড়তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের সঙ্গে বডি ওন ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা নেই।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফটকের তুলনায় গেরুয়া ফটক দিয়ে বাইরের লোকজন ঢোকার চেষ্টা করবে। এ কারণে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেশি রাখা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৭ জন। বিভিন্ন পদে চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ১৭৮ জন প্রার্থী অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল ও ১১টি ছাত্র হল। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবেন একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা।
জাকসুর মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশ ছাত্রী, বাকি ৭৫ শতাংশই ছাত্র। ভিপি পদে কোনো নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হননি। জিএস পদে ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মেয়ে দুইজন। আর চারটি পদে কোনো মেয়ে প্রার্থীই নেই। সবগুলো হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থীর ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ ছাত্রী। আর মেয়েদের হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫ পদে প্রার্থীই নেই। নির্বাচনে বাম, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে সর্বমোট আটটি প্যানেল অংশ নেবে। ছাত্রদল থেকে ভিপি ও জিএস পদে লড়ছেন যথাক্রমে শেখ সাদী হাসান ও তানজিলা হোসেন বৈশাখী। বাগাছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ লড়বে আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়ামের নেতৃত্বে। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলে আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি এবং মো. শাকিল আলীর জিএস পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইসলামী ছাত্রশিবির ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে লড়বে। তাদের ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস মাজহারুল ইসলাম। ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলে জিএস পদে শরণ এহসান, এজিএস (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং এজিএস (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি লড়বেন। এ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন আদালত। ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্টের ‘সংশপ্তক পর্যদে’ জিএস পদে জাহিদুল ইসলাম ঈমন, এজিএস-নারী পদে সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস লড়াই করছেন।
তবে সহসভাপতি (ভিপি) পদে আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত আরিফুজ্জামান উজ্জল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু, ছাত্রদলের শেখ সাদী হাসান ও শিবির সমর্থিত প্রার্থী আরিফ উল্লাহ। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আলোচনায় আছেন শিবির সমর্থিত মাজহারুল ইসলাম, ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী এবং বাগছাস সমর্থিত তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
ভোট গণনায় ব্যবহার করা হবে বিশেষ ওএমআর মেশিন। ফলাফল তাৎক্ষণিক সিনেট হলে বসানো বড় স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে এবং প্রতি ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আপডেট জানানো হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ দপ্তরের ফেসবুক পেজে ফলাফল ও নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে।
মন্তব্য করুন