দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে চলা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও সিনেট নির্বাচন এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এই নির্বাচনে বিভিন্ন প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)— শীর্ষ এই তিন পদেই লড়ছেন সাত নারী প্রার্থী।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সংসদ ও সিনেট মিলিয়ে মোট ১৯টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩২ ছাত্রী। অন্যদিকে, ছাত্রী হলগুলোতে ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন ২১৭ নারী প্রার্থী।
রাকসু নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, এবারের নির্বাচনকে ধরা হচ্ছে রাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রার্থীর অংশগ্রহণ হিসেবে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩২০ প্রার্থী, আর হল সংসদে রয়েছেন ৭৫৪ জন। এর মধ্যে ২৮৮ ছাত্র আর ৩২ ছাত্রী।
রাকসুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে কখনো কোনো নারী ভিপি নির্বাচিত হননি। জিএস ও এজিএস পদেও নারীদের প্রার্থিতা বা জয়ের নজির খুব সীমিত। তবে এবার শীর্ষ তিন পদেই নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছে।
শীর্ষ ৩ পদে লড়ছেন যে নারী প্রার্থীরা : রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাসিন খান। তিনি ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের প্রার্থী।
‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ জিএস প্রার্থী নির্বাচন করেছে নুসরাত জাহানকে, স্বতন্ত্র থেকে জিএস পদে লড়ছেন আছিয়া খাতুন, ‘রাকসু ফর র্যাডিকেল চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আফরিন জাহান, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন নুসরাত জাহান নূপুর।
এদিকে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে এজিএস পদে লড়ছেন জাহিন বিশ্বাস এষা ও ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে এজিএস পদে জান্নাত আরা নওশীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এ বিষয়ে রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ত্বাসীন সিদ্দিকা রূপা বলেন, ‘রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ৩৫ বছর আগে। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কিছু বদলে গেছে। নারীরা এখন নেতৃত্বের আসনে উঠছে, আর সেই পরিবর্তনের প্রতিফলন আমরা এবার রাকসু নির্বাচনে দেখতে পাচ্ছি।’
কোন প্যানেলে কতজন নারী : প্যানেলগুলোর মধ্যেও নারী প্রার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এবং ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ উভয়টিতেই রয়েছেন সর্বাধিক চারজন নারী প্রার্থী।
ছাত্রশিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ এবং ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ এই তিন প্যানেলের প্রত্যেকটি রয়েছেন তিনজন করে নারী প্রার্থী। ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২’ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘রাকসু ফর র্যাডিকেল চেঞ্জ’ এ দুই প্যানেলের প্রতিটিতে রয়েছেন দুজন করে নারী প্রার্থী। বামপন্থি ছয়টি সংগঠনের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ এখানে আছেন একজন নারী প্রার্থী।
তবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ‘সচেতন শিক্ষার্থী জোট’ কোনো নারী প্রার্থী রাখেনি।
সবচেয়ে আলোচিত নাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান, যিনি রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মন্তব্য করুন