চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর বিরুদ্ধে আবারও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনের বরাবর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন বিভিন্ন বাম সংগঠনের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব গত বুধবার (৮ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪ মিনিটে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্রিমিনোলজি বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এতে চাকসু নির্বাচন আচরণবিধিমালা-২০২৫ এর ৪(ঙ) ও ৬(জ) ধারার লঙ্ঘন হয়েছে।
এ ছাড়া একই প্যানেলের সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী জিহাদ হোসাইন বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) তার ফেসবুক আইডিতে দুটি নির্বাচনী প্রচারণা সংক্রান্ত ছবি পোস্ট করেন। এটি আচরণবিধির ৫(গ) ও ১০(ক) ধারার লঙ্ঘন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ পর্ষদের পক্ষ থেকে অভিযোগে বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব প্যানেলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে এ ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনকে উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনি আচরণবিধিমালার ৪(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে যেখানে ক্লাস বা পরীক্ষা হয়, সেখানে কিংবা আশপাশে সভা-সমাবেশ করা যাবে না। ক্লাস বা পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়— এমন কোনো কাজ, যেমন কোনো ধরনের সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী সুদর্শন চাকমা বলেন, আজ আমরা দুটি বিষয়ের ভিত্তিতে অভিযোগ জানিয়েছি। গতকাল শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী জিহাদ হোসাইন এমন ছবি পোস্ট করেছে, যেখানে পাহাড়ি সমাজের পোশাক বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে পাহাড়ি সংস্কৃতিকে অবমাননা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব ক্লাসে গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে। আচরণবিধি অনুযায়ী এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে শিবির সমর্থিত প্যানেলের সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী জিহাদ আহনাফ বলেন, আমি একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। মানুষকে নিয়ে সম্প্রীতির ক্যাম্পাস গড়তে চাই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার ভুল হয়েছিল, আমি সেটি স্বীকার করেছি এবং ভবিষ্যতে এমন হবে না বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি। আমার কস্টিউম ডিজাইনার এই ভুলটি করেছে। কেউ ইচ্ছা করেই এমন ভুল করতে চায় না।
এর আগে গত বুধবার ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেন রনির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় ছাত্রদল।
ছাত্রদলের অভিযোগে বলা হয়েছে, ইব্রাহীম হোসেন রনি দুপুরে শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনের (নতুন কলা ভবন) ইতিহাস বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে প্রচারণা চালান। এ সময় শ্রেণিকক্ষের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে প্রায় ২০ মিনিট ধরে প্রচারণা চালানো হয়, যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।
চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মনির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের আচরণবিধি কমিটির পরিচালক, নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। আশা করি অভিযোগকারীরা এর সুফল পাবেন।
মন্তব্য করুন